প্রাণের ৭১

বাম রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ও অব্যক্ত কথা!

ডিয়ার বাম সৈনিক আপনাদের নির্লজ্জতাকে সমর্থন করতে পারছিনা বলে দুঃখিত। আওয়ামী লীগের বাইরে যাদেরকে সমর্থন দেয়া যায় তার সবকিছুই আপনাদের মধ্যে ছিল বা আছে বলা যায় কিন্তু আপনারা যে ভ্রান্ত ধারণা এবং নীতি নিয়ে রাজনীতি করছেন তা কিন্তু সমীচীন নয়। বাম মতাদর্শের অনেককিছুই আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল লাগে বলেই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে সেটা আমাকে করতে হচ্ছে এবং রাজনীতির পচনশীল অবস্থা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসবেন সেই কামনা করছি।

আপনি সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনার করবেন সেটাই স্বাভাবিক এবং আমি নিজেই সেটা করে থাকি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ হিসাবে। কিন্তু আপনারা যেভাবে নির্লজ্জ ও একতরফা সমালোচনা করে আওয়ামী বিরোধিতায় মত্ত হয়ে আছেন তা কখনোই রাজনীতির গুণগত ও মানসম্পন্ন পরিবর্তন সম্ভব নয়। অথচ, আপনারা স্বাধীনতার পর থেকেই সেটাকে গ্রহণ করে শুধু নিজেদের বিকাশের পথই রুদ্ধ করে রাখেননি বরং একই ভাবে স্বাধীনতা বিরোধী দেশিয় শক্তিকেও রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং এখনো করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তা নির্দ্বিধায় বলা যায় একজন রাজনৈতিক সচেতন মানুষের চোখে পর্যালোচনায়।

আপনাদের সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে যেটা বিদ্যমান তা হল ভুলকে অস্বীকার করার তোড়জোড় এবং সেটা করতে গিয়ে এমনভাবে বিষয়টিকে হাস্যকর করে তোলেন তা একজন সচেতন পাঠক হিসাবে এড়ানোর উপায় থাকে না। একটা বহুল পরিচিত স্লোগান আছে যে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন কিন্তু আপনারা সামান্যতেই রেগেমেগে একাকার হয়ে যান যা রাজনৈতিকভাবে আপনাদের একাকী করে তুলছে বলেই মনে করি। অথচ, আপনাদের সম্বন্ধে আমার বা সমাজের একটা শ্রেণীর ধারণা কিছুটা উপরের দিকে ছিল। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ও তুখোড় ছাত্রটি নিজেদের অধিকার এবং সমাজের অধিকার সচেনতায় বাম রাজনীতিতে আসে পরিবর্তনের নেশায় কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে আর ওঠা হয়না নেতাদের একঘেয়েমির ফলে। বঞ্চিত হতে হতে একটা সময় সেই মেধাবী ছাত্রটির মস্তিষ্কের মাঝে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা থেকে বেরুনোর উপায় বাতলানোর সুযোগই আর হয়ে ওঠেনা এবং পরবর্তীতে নেতৃত্ব গ্রহণ করলেও সে পূর্ববর্তী নেতাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেনা। কারণ, সম্পদের শূন্যতা যতো সহজে পূরণ করা সম্ভব ঠিক ততটা সহজে মস্তিষ্কের শূন্যতা পূরণ সম্ভব হয়ে ওঠেনা বরং তার জন্য প্রয়োজন হয় অধ্যাবসায় ও একাগ্রতা।

রাজনৈতিক একাগ্রতা না থাকলেও নেতাদের প্রতি যে একাগ্রতা নিয়ে প্রতিটি আন্দোলন ও প্রোপাগান্ডায় ঝাপিয়ে পড়েন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এই প্রশংসা কতটা গ্লানিকর ও গ্লানিবোধে আক্রান্ত তা না বোঝার সামর্থ্যের অভাবে ভুল নীতি এবং ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে একটা নীতির ঝাণ্ডা দিনের পর দিন একইভাবে চলে আসছে তাতে দেশের মানুষ কি ভাবছে বা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের আবহমান সংস্কৃতির কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখার মতো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারছেন না বলেই আজকে বাম রাজনৈতিক পরিচয় শুনলেই মানুষ অবজ্ঞা ভরে তাকাতে দুবার ভাবছেনা। অনেক তো হলো, এবার একটু ঝাকুনি দিয়ে বের হয়ে আসুন এবং আমরা যারা আপনাদেরকে আওয়ামী লীগের বাইরে বাংলাদেশের প্রগতিশীল দল বলে বিবেচনা করি তারা অন্তত দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংস্কৃতির বিবর্তনের শক্ত প্রাচীর হিসাবে আপনাদেরকে দেখি।

আজকে আপনাদের আওয়ামী লীগ বিরোধিতা শিল্পের পর্যায়ে উপনীত হয়ে গেছে। তাই জাতির ক্রাইসিস মুহূর্তে যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে স্বাধীনতা বিরোধী এবং দেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী জামাতের মতো রাজাকারদের সংগঠন থেকে একটা দল ২২ জনকে নমিনেশন দিয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের আটজন ও তাদের পোষ্য সন্তানদের নমিনেশন দিয়ে পবিত্র সংসদে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন এমনকিছু ব্যক্তি ও সংগঠন যাদের একটা উজ্জ্বল অতীত ছিল কিন্তু বর্তমানে পঁচে যাওয়া সুশীল দাবিদার জাতির বিবেক নামধারী, অনেকটা গায়ে মানে না আপনি মোড়ল এর মতো।

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বদলায়। তাই ডঃ কামাল, আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মনসুর, অধ্যাপক আবু সাঈদ, মান্নারা বদলে গেছে এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়েছেন কিন্তু আপনারা কি বদলে গেছেন? 
নিশ্চয়ই বদলাননি, অন্তত আপনাদের ইশতেহার সেকথা বলেনা কিন্তু কেন ব্যক্তিগতভাবে এখনো আওয়ামী বিরোধিতায় নিজেদের শক্তির অপচয় করছেন? 
স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে বাম দলের চিনপন্থী অংশটির নেতৃত্ব সরাসরি বিরোধিতা করলেও তার বেশিরভাগ সদস্য এবং অন্য বাম দলগুলো সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেই হিসাবে এদেশের মুক্তি অর্জনে আপনাদের গৌরবজনক ভূমিকা আছে কিন্তু কেন বঞ্চনার শিকলে নিজেকে জড়িত করছেন?

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক বা বর্তমান একজন নেতা যখন শেখ হাসিনাকে কওমি জননী বলে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিতর্কিত করছেন তখন কি নিজেকে একবারের জন্যও প্রশ্ন করছেন যে, আমি কাদের পক্ষে ওকালতি করছি? 
মেনে নিলাম রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্যে আপনি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছেন কিন্তু যখন একজন ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতাপূর্ণ ব্যক্তি বা মসজিদের ঈমামের নেতৃত্বে মুসলমানদের রক্ষার্থে ধানের শীষে ভোট দিতে জনগনকে আহবান জানাচ্ছে তখন কেন তা নিয়ে দুটো কথা বলতে পারছেন না। নাকি আপনার ঈমানের সলতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে নিজের বিবেককেও বেধে ফেলেছেন যে, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধিতা করলে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে?

ডিয়ার বাম সৈনিক আপনাদের নির্লজ্জ ভূমিকা আমাদেরকে ব্যথিত করছে এজন্য যে, আপনারা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ছেন আর সেখানে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি ও বাংলাদেশ বিরোধী জামাত শিবিরের অনুসারীরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। একজন প্রগতিশীল ও রাজনৈতিক সচেতন মানুষ হিসাবে আপনাদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কখনোই সমর্থন করতে পারছিনা। আপনারা আর কতদিন ঘুমিয়ে থাকবেন তা আপনাদের বিচক্ষণতার উপরে নির্ভর করছে বলা যায়। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আপনাদের খুব বেশি ক্ষতি হবেনা কিন্তু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলে আপনাদের বিলুপ্ত হতে সময় লাগবেনা। কারণ, এই সাম্প্রদায়িক শক্তি আপনাদের মানে কমিউনিস্টদেরকে নাস্তিক বলে মানে এবং তা সভা সমাবেশে প্রচারও করে। আওয়ামী লীগ না থাকলে দেশে আপনাদের থাকবারও কোন জায়গা নেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

অতএব, নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা থেকে সরে এসে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলুন তাতে অদূরভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের বাইরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আপনাদের হাতেই বর্তাবে বলে বিশ্বাস না করার কোন কারণ নেই। রাজনীতিতে গুণগত ও মানসম্পন্ন পরিবর্তন নিয়ে এগিয়ে আসতে নিজেদের মনের ময়লা পরিস্কার করে আসবেন সেই শুভ কামনা থাকবে সবসময় যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও উদ্দেশ্য সমুন্নত করার সাথে সাথে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি কল্যানকামী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তুলবে।

#বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক 
#জয়বাংলা🇧🇩

মোয়াজ্জেম হোসেন তারা

লেখক, এক্টিভিস্ট  , ফ্রান্স 






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*