প্রাণের ৭১

পররাষ্ট্র দফতরসহ বিজেপি কংগ্রেসের সঙ্গে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সিরিজ বৈঠক

বিএনপিকে দিল্লির সাফ বার্তা জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ুন

চার দিনের ভারত সফরের পর স্পষ্ট বার্তা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি দলকে। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মিলিত হয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম জে আকবর, জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং শাসক বিজেপি সমর্থক ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফাউন্ডেশনের’ অধিকর্তা অনির্বাণ গাঙ্গুলির সঙ্গে। তবে এই সাক্ষাৎকারগুলো বিএনপি প্রতিনিধি দলের কেউ স্বীকার করেননি। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতর, রাহুল গান্ধীর সচিবালয় এবং বিজেপি দলের থেকে বৈঠকগুলোকে নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতের শাসক বিজেপি দল বাংলাদেশের বিএনপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বার্তালাপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শ্রী গাঙ্গুলিকে। সভাপতি অমিত শাহই জানিয়ে দিয়েছিলেন দলীয় বার্তা বিএনপিকে পৌঁছে দিতে। বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে বিএনপিকে বর্তমানে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে এবং সাধারণ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। তবেই তাদের দলের গণতান্ত্রিক চরিত্র পরস্ফুিট হবে। এই স্পষ্ট বার্তা নিয়েই বিএনপির তিন নেতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব হুমায়ুন কবীর শনিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা। এরা দিল্লির পাঁচতারা লে মেরিডিয়ান হোটেল থেকে লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের কাছে আকস্মিক ছিল বিজেপি নেতৃত্বের প্রতিনিধি অনির্বাণ গাঙ্গুলির স্পষ্ট কথোপকথনে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমানে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী মোর্চা গড়লে বিজেপির পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিজেপি পার্টির পক্ষে এমন কোনো পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়, যাদের সঙ্গে উগ্র মৌলবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংস্থার সঙ্গে জামায়াতের যোগসাজশ রয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট রয়েছে। এই তথ্য প্রতিনিধি দলকে সাবেক গোয়েন্দা প্রধানরা আইডিএসএ বৈঠকেও জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া জামায়াত নিষিদ্ধ করার আবেদনে মামলা চলছে বাংলাদেশে।নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না সন্দেহ। তবে অন্য নামে নির্বাচন কমিশনে নাম নথিভুক্ত করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।প্রতিনিধি দলটি বিজেপি নেতাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন, যেহেতু জামায়াতের প্রায় সাত শতাংশ ভোট রয়েছে তাই তারা নির্বাচনী কৌশলগত সমঝোতা করেন। আদর্শগতভাবে কোনো মিল নেই। অনির্বাণ পাল্টা যুক্তি দেন, নির্বাচনী কৌশল করলেও জামায়াতকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০১ সালে নির্বাচনের পরে বেগম খালেদা জিয়া জামায়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষিমন্ত্রী এবং মহাসচিব আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন। তাতে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে মৌলোবাদ প্রসারিত হয়। সবাই জানেন, এই নিজামি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সমর্থক আল বদরের নেতা এবং বহু মানুষ খুন করার অপরাধে তার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার হয় এবং মৃত্যুদণ্ড হয়। আলী আহসান একই রকমের যুদ্ধাপরাধী। তারও ফাঁসি হয়। তিনি ছিলেন আল বদরের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এসব ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিলে ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব নয়। এই কথাটি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও বুঝিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাবেক ইউপিএ মন্ত্রী আনন্দ শর্মা। কিছুদিন আগে রাহুল গান্ধীর সভাপতি পদে অভিষেক সমারোহে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দীপু মনিসহ এক প্রতিনিধি দল এসেছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি বোঝানোর চেষ্টা করেন, অতীত ভুলে যান, সামনের দিকে তাকান। এই কথাটা বেগম জিয়া তাঁর সর্বশেষ ভারত সফরে এসে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন বাংলাদেশ সফর করেন তখন বেগম জিয়া জামায়াত হরতাল ডেকেছে বলে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎকার চেয়েও দেখা করেননি। এটা ভারতের কোনো সরকার ভুলবেন না। এটাই তাঁদের বোঝানো হয়েছে। এই কারণে বিশ্বাস যোগ্যতার নিরিখে আওয়ামী লিগ অনেক নির্ভরযোগ্য। ভারতের প্রধানরাজনৈতিক দলগুলো কোনো দিনই এসব তথ্য ভুলবেন না।বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের একমাত্র সান্ত্বনা ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস রয়েছে তারা চান অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যেমনটা ভারতে হয়ে থাকে। তবে কোনোভাবেই ভারতের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। বুদ্ধিজীবীরা বুঝিয়েছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থেই বিএনপির উচিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং জামায়াতের সঙ্গে মোর্চা না করেই। জিততেই হবে এই ধারণা ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করাই গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচায়ক। বয়কট কোনো কারণেই গণতান্ত্রিক নয়। অনেকের প্রশ্ন নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে বিএনপি নেতাদের এমন সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন কি? উত্তর হলো—ভারত সবসময়েই প্রত্যেক দেশের গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু বহুবার চেষ্টা করলেও কখনই জামায়াত নেতাদের সঙ্গে গোপনেও ভারত সরকারের কেউ বৈঠক করেন না। করবেনও না। ফলে বল এখন বিএনপির কোর্টে। নিজেদের গণতান্ত্রিক পরিচয় বজায় রাখতে হলে নির্বাচনে জামায়াত ব্যতীত লড়াই করা ভিন্ন অন্য কোনো পথ নেই।সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*