প্রাণের ৭১

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বেশি বয়সে মা হওয়ার যত বিপদ

কম বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়া যেমন প্রচণ্ড ঝুঁকির কাজ, তেমনি বয়সটা বেড়ে গেলেও বিপদ বাড়তে থাকে। ডেনিশ অভিনেত্রী ব্রিগিটা নিলসন ৫৪ বছর বয়সে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু জুন মাসে পঞ্চম সন্তান ফ্রিডার জন্মদানের পর থেকেই তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিষয়টি একটি বিতর্ককে জোরালো করেছে। আর তা হল বেশি বয়সে সন্তান জন্মদান।

ব্রিগিটা নিলসন তার সমালোচনার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক মেয়েরা ভাবে হে ঈশ্বর আমার তো অনেক বয়স। কিন্তু ভাবুন তো কত পুরুষ ৬০ অথবা ৭০ এর কোঠায় এসে বাবা হয়েছেন?’

ব্রিগিটা নিলসন বলছেন, অন্য কেউ যদি মা হওয়ার বয়স সম্পর্কে ভিন্ন কোন মত পোষণ করেন তিনি তা সম্মান করেন। তবে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে এটা তার জীবন। তার সিদ্ধান্ত তার নিজের। ২০০৬ সালে বয়স ৪০ হওয়ার পর ব্রিগিটা নিলসন তার ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেছিলেন। তাকে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন নিজের ডিম্বাণু দিয়ে তার আবার মা হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ।

এরপর প্রজনন সহায়তা নিয়ে ১৪ বছর চেষ্টার পর তিনি সফল হয়েছেন। তার বর্তমান স্বামী মাতিয়া ডেসির ঔরসে এটি তার প্রথম সন্তান। তবে আগের বৈবাহিক সম্পর্কে তার আরো চারটি ছেলে রয়েছে। কিন্তু এনিয়ে বিতর্ক আসলে কোথায়? বিশ্বব্যাপী নারীদের গর্ভধারণের বয়স বাড়ছে। ১৯৯০ সালে চল্লিশ বছর বয়সে নারীদের গর্ভধারণের যে হার ছিল এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্রিটেনে পরিসংখ্যান বিভাগের হিসেবে দেখা যাচ্ছে সন্তান জন্মদানে সক্ষম সকল বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের হার কমেছে। কিন্তু চল্লিশ এর কোঠায় থাকা নারীদের ক্ষেত্রে তা উল্টো ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রজনন সহায়তা দেয় এমন ক্লিনিকগুলো বলছে তাদের কাছে চল্লিশ ও পঞ্চাশের কোঠায় থাকা নারীরা আগের থেকে অনেক বেশি আসছেন।

এরকম সহায়তা দেয়া সংস্থা কেয়ার ফার্টিলিটি গ্রুপের ডঃ জেনি এলসন বলছেন এই কারণে শুধু বেশি বয়সী নারীদের জন্য তাদের আলাদা তথ্য সম্বলিত নির্দেশিকা তৈরি করতে হচ্ছে। তিনি বলছেন, অনেক বয়স্ক নারীরা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকিও বাড়ছে।

তার ভাষায়, ‘বয়স পঞ্চাশের কোঠায় হলে ডায়াবেটিস, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল বা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই আমাদের এসব নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে। অনেক বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, বয়স ৩০ হওয়ার পর থেকে মায়েদের প্রি-একলামসিয়া, উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বেশি বয়সের ডিম্বাণু থেকে জন্ম নেয়া শিশুর জিনগত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। পঞ্চাশের কোঠায় বুকের দুধ খাওয়াতে সাধারণত মায়েদের সমস্যা হয়না।

তবে এই বয়সে সন্তান জন্মদানের পর মায়েদের মেনোপজ আরো দ্রুত সময়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে নারীরা হরমোনের নানা ধরনের ওঠানামা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরতে পারেন। যৌনতার ইচ্ছাও কমে যায়। বেশি বয়সে মা হওয়ার আরো একটি সমস্যা হল তার বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের সহায়তা কমে যাওয়া। বয়স কম হলে মায়েদের সহায়তায় যেভাবে সবাই এগিয়ে আসে, বয়স বেশি হলে সেটি হয়না।

লন্ডন উইমেনস ক্লিনিকের ডঃ যায়নেপ গুরতিন বলছেন, ‘সব মায়েদেরই কোন না কোন ধরনের সহায়তা দরকার হয়। কিন্তু বেশি বয়সী মায়েদের জন্য সেরকম সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেই’ তিনি আরো বলছেন, বেশি বয়সে যারা বাবা হচ্ছেন তাদের তুলনায় বেশি বয়সী মায়েরা বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন।

ডঃ যায়নেপ গুরতিন উদাহরণ দিয়ে বলছেন, ‘অভিনেত্রী ব্রিগিটা নিলসন সমালোচনার মুখে পড়েছেন কিন্তু হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনির ক্ষেত্রে কিন্তু কেউ এতটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তিনি কিন্তু ৫৬ বছর বয়সে যমজ সন্তানের বাবা হয়েছেন। নারীরা যদি নিজের পেশা বা অন্য কোন কারণে মাতৃত্বকে বিলম্বিত করেন তাহলে তাদের অনেক ক্ষেত্রে স্বার্থপর বলে মনে করা হয়। বাবাদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়না’

তবে নারীরা আজকাল এসবের তোয়াক্কা করছেন না। খোদ যুক্তরাজ্যে অল্প বয়সী নারীরা আগের থেকে অনেক বেশি ডিম্বাণু সংরক্ষণ করছেন। তাই বেশি বয়সে মাতৃত্বের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*