প্রাণের ৭১

ভারতের আসানসোলে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতার পেছনে কী কারণ?

হিন্দু ধর্মীয় উৎসব রামনবমী পালন কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল শহরে দুদিন আগে যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়িয়েছিল, তারপরে আজও সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে।নতুন করে সংঘর্ষের খবর না পাওয়া গেলেও শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। গুজব ছড়ানো বন্ধের উদ্দেশ্যে আসানসোল এবং পাশের রানিগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে দোকানপাট বন্ধ। অনেকে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দাঙ্গা পুলিশ টহল দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আসানসোলে প্রবেশ করেই পুরো শহরের এই চিত্র দেখতে পান বিবিসি সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী।

পুলিশ
Image captionএখন কোন কোন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও, ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা যথাযথ ছিল না বলেই স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন

তিনি বলছেন, শহরের প্রধান সড়কে দুই একটি বাস চলাচল করলেও যাত্রী নেই বললেই চলে। কিন্তু যেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। সব মানুষের মধ্যেই আতংক রয়েছে, উত্তেজনা রয়েছে।

একের পর এক বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় হিন্দুরা আশ্রয় নিয়েছেন। তবে মুসলমানরা তাদের নিজেদের বাড়িঘরেই রয়েছেন।

কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানে পর পর এরকম দুটি দাঙ্গা হওয়ার কারণ কী?

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, আসানসোলের হিন্দু এবং মুসলমান, উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই জানিয়েছেন যে, এর পেছনে রাজনৈতিক লোকজন রয়েছে, তাদের উস্কানি রয়েছে। এর বাইরে হিন্দু এলাকা গুলোয় শোনা গেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, আবার মুসলমানরা বলছেন, রামনবমীর যে মিছিল হয়েছে, সেখান থেকেই উস্কানিমূলক শ্লোগান দেয়া হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানে চলে যাবার কথা বলা হয়েছে । দু’তরফেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ জানানো হয়েছে।

রামনবমী উৎসবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মিছিল।ছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionরামনবমী উৎসবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মিছিল।

তবে সরেজমিনে পরিদর্শনের পর বিবিসির এই সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে প্রথম সহিংসতার শুরু হয়। চাঁদমারি এলাকা দিয়ে যখন রামনবমীর মিছিল যাচ্ছিল, তার ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

অমিতাভ জানাচ্ছেন, একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, এখানে পুলিশ প্রশাসনের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যেখানে গোটা রাজ্যেই একটা আশংকা ছিল যে, রামনবমীকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হতে পারে, রবিবার থেকেই যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তারপরেও পুলিশ যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি বলেই মনে হচ্ছে।

আজও বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপস্থিতি অনেক কম দেখতে পেয়েছেন এই সংবাদদাতা।

আসানসোলের সংঘর্ষের এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে
Image captionআসানসোলের সংঘর্ষের এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে

কিন্তু এ ঘটনায় হিন্দু ও মুসলমানের সম্পর্কের ওপর কতটা প্রভাব পড়ছে? কতটা খারাপ হয়েছে?

অমিতাভ বলছেন, ”এই মুহূর্তের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে মনে হবে, আমি যেন একটা আন্তর্জাতিক সীমারেখায় দাঁড়িয়ে আছি। চাঁদমারির এই এলাকার রেলপাড়ের একদিকে হিন্দু এলাকা, অন্যদিকে মুসলমানদের বসবাস। কিন্তু একদিকের মানুষ অন্যদিকে যাচ্ছেন না।”

”কিন্তু স্থানীয় বয়স্করা বলছেন, দুই সম্প্রদায়ের মাঝে এরকম ঝামেলা এর আগে কখনো তারা দেখেননি। যা হয়েছে, তা সাময়িক বলেই তারা মনে করছেন। পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়ে গেলেই আবার হয়তো দুই তরফে মেলামেশা যাতায়াত সবই চলতে থাকবে। ”

”তবে একটি বিষয়ে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই একমত যে রাজনৈতিক নেতাদের পেছন থেকে উস্কানি বন্ধ করতে হবে। ”

bbc






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*