প্রাণের ৭১

মাইগ্রেনের ব্যথা ও কিছু করণীয়

মাথা থাকলে ব্যথা হবেই- খুব সহজ আর প্রচলিত কথা। কিন্তু যার হয়, সে-ই জানে এ ব্যথা কেমন লাগে। আর তা যদি মাইগ্রেনের ব্যথা, তাহলে তো কথাই নেই। সারাদিনের কাজকর্ম শিঁকেয় তুলে ঘরে বিশ্যাম নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আজ থাকছে মাইগ্রেন সম্পর্কে কিছু কথা-

মাইগ্রেন কী?

মাইগ্রেন অর্থ `আধকপালে‘ ব্যথা। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে শুরু হয় বলেই এমন নাম। অনেক সময় ব্যথা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে থাকা ধমনিগুলো ব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি এবং বমি বমি ভাব, রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।

কেন হয়?

মাইগ্রেন কেন হয়, তা পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। চকোলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা- ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগ বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ

ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা, বমি ভাব- এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও দেখা দিতে পারে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূত হতে পারে। এসময় শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে|

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে কিছু ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়ম মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়:

– প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
– অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
– কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে।
– উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
– বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
– মাইগ্রেন শুরু হলে উচিত প্রচুর পানি পান (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে) ও বিশ্রাম করা। ঠাণ্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
– শারীরিক ব্যায়াম, নিয়মিত হাঁটাচলা, দৌঁড়ানো বা সাঁতার কাটা। যা রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

যেসব খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে:

– ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন- ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
– বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
– সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
– ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
-আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন

– চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না।
– গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি।
– আপেল, কলা ও চিনাবাদাম।
– পেঁয়াজ

মাইগ্রেনের ব্যথার পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এড়িয়ে চলা সম্ভব। হুট করে ব্যথানাশক না খেয়ে কিছু অভ্যাস মেনে, কিছু অভ্যাস এড়িয়ে মুক্তি পাওয়া যায়।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*