প্রাণের ৭১

মিয়ানমারে সংখ্যালগু নির্যাতন

মিয়ানমার এইবার খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীদের বিতাড়ন শুরু করছে।

মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নিপীড়ন চালানোর পর এবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিচিন আদিবাসী খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর উপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এসেছে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

বিবিসি জানিয়েছে, চীন ও ভারত সীমান্তের ওই প্রদেশে এপ্রিলের প্রথমদিক থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার লোককে সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে বলে ভাষ্য জাতিসংঘের।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথমদিকে সেনাবাহিনী ও কিচিন বিদ্রোহীদের মধ্যে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় পর তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ কিচিনভিত্তিক সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলোর।

২০১১ সালে ১৭ বছর ধরে চলা অস্ত্রবিরতি ভেঙে পড়ার পর থেকে পর্বতময় এলাকাটিতে মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী কিচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীগুলোর নিয়মিত সংঘর্ষ হয়ে আসছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর লড়াই আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে শুক্রবার কেআইএ-র এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

এতে ওই এলাকার মানবিক পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

কেআইএ-র ওই মুখপাত্র, কর্নেল নও বু জানিয়েছেন, কেআইএ-র সঙ্গে লড়াই করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিতে দুই হাজার পদাতিক সৈন্য, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে এবং অঞ্চলটির ১৮টি শহরের মধ্যে নয়টিতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তিনি বলেছেন, “সেনাবাহিনী মিয়ানমারের নিম্নাঞ্চল থেকে আরও সৈন্য পাঠাচ্ছে এবং এ কারণেই লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠবে। এতে শরণার্থীর সংখ্যাও আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আরও দুর্দশার সম্মুখীন হতে পারে।”

১৯৬০-র দশক থেকে কিচিন সৈন্যরা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার পর থেকে সংঘর্ষ ‘সবচেয়ে তীব্র রূপ নিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কয়েক হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি আরও বহু মানুষ লড়াই কবলিত এলাকায় আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রবেশ করতে দিতে ত্রাণ সংস্থাগুলো মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

“বেসামরিকদের সুরক্ষা নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত; যাদের মধ্যে অন্তঃসত্বা নারী, বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা রয়েছেন,” বলেছেন জাতিসংঘের কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) বিষয়ক দপ্তরের প্রধান মার্ক কাটস্।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী সংখ্যালঘুদের সংঘাত লেগে আছে। বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে সংখ্যালঘু কিচিনরা প্রধানত খ্রিস্টান। নিজেদের অঞ্চলগুলোর অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৬১ সাল থেকে তারা মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।

এ লড়াইয়ে কিচিন ও অপর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য শানে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গত ছয় দশকে মিয়ানমার সরকার দেশটির অন্যান্য আদিবাসী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিচুক্তি অনুসরণ করে আসলেও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী কেআইএ-র সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গেছে।

অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, বিশ্বের নজর যখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের দিকে, যে সঙ্কটের কারণে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে, তখনই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কিচিনদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে।

গত মাসে এক প্রতিবেদনে ইউএনএইচআর কিচিনে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যতন ও যৌন সহিংসতার মতো অপরাধের উল্লেখ করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ও দেশটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ সীমিত করায় দেশটির ক্ষমতাসীন নেতা অং সান সু চি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন।

কিচিনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন প্রতিবেদন খারিজ করা বন্ধ করতে জাতিসংঘ দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*