প্রাণের ৭১

মীরসরাইয়ের আওয়ামী রাজনীতির জোয়ারে অনেক খড়কুটো এসেছে:ত্যাগীরা নির্বাসনে!

মোহাম্মদ হাসানঃ চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত ছিলেন, দলের দুর্দিনে যাঁরা ত্যাগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন, আজ তাঁরাই নিপতিত হয়েছেন চরম দুর্দিনে। ক্ষমতাবান, সুবিধাভোগী আর স্বার্থবাজ নেতারা তাঁদের দূরে ঠেলে রেখেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা। নেতার কাছেও ভিড়তে দেন না। এমপিকে ঘিরে রাখেন নব্য সুযোগসন্ধানী নেতারা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী রাজনীতির ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে অধিকাংশ স্থানে।

দেখা গেছে, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা দলে কোণঠাসা আর ভুঁইফোড় সুবিধাভোগীরা বিপুল দাপটে; অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতায় তাঁরা পরিপুষ্ট। আর ত্যাগীরা বঞ্চিত-নিপীড়িত; তাঁদের মুখে শুধুই হতাশার সুর। বিভিন্ন কমিটিতে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি-অনিয়মে আকণ্ঠ নিমজ্জিত; তাই দেখে নিবেদিতপ্রাণ নেতারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে হচ্ছেন নির্যাতিত। তাঁদের অনেকে ক্ষোভে-দুঃখে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন; এই অবস্থা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোতেও তৈরী করতে ব্যাস্ত সুযোগ সন্ধানী নেতৃত্ব।

সুযোগসন্ধানীদের তৎপরতার কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত তৃণমূল আওয়ামী লীগ। উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের মধ্যে দলীয় আদর্শের ছিটেফোঁটাও নেই। ছলে-বলে-কৌশলে, কখনো মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে, কখনো চাটুকারিতা করে তারা দলীয় পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত।আবার বিএনপি-জামায়াত থেকে আগত নেতারাই দলে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন।

সাবেক একজন ছাত্রলীগ নেতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, রাজনীতি এখন ব্যবসা। টেন্ডারবাজির টাকা দিয়ে পদ কেনা যায়। এ জন্য দায়ী কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব। জনগণের কাছে দলের আদর্শ ও সরকারের উন্নয়ন বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরার ভাবনা ক্ষমতাসীন নেতাদের নেই। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কারণে সচেতন লোকজন দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নব্য আওয়ামী লীগারদের কাছে, সুবিধাবাদী নেতাদের কাছে আমরা জিম্মি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে হামলা আর মামলার শিকার হয়েছি আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে পাঁচ-সাতজন সুবিধাভোগী নেতার। এখন আমরা দল থেকে নির্বাসিত।তবে আখের গোছানোয় ব্যস্ত নেতাদের অপরাজনীতি একদিন ধ্বংস হবেই।

মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সঙ্গী নেতাকর্মীরা এমন পরিস্থিতির শিকার বলে জানা গেছে। পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি ক্ষমতার স্বাদ পুরোপুরি ভোগ করছেন। তাঁদের বেশির ভাগ বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অথচ একদশক আগে-পরে প্রতিপক্ষের সহিংস আন্দোলনের সময় তাঁদের মুখও দেখা যায়নি এলাকায়।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে পরিচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম আলা উদ্দিন, চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা, এনায়েত হোসেন নয়ন,এমরান উদ্দিন, আবু সুফিয়ান বিপ্লব,ভিপি জসিম, জিএস শহীদুন্নবী, এম শাহাজাহান, মোশারফ হোসেন, ফেরদৌস হোসেন আরিপ, মাষ্টার এনামুল হক, হুমায়ুন কবির সহ অর্ধশতাধিক নেতা এখন কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করলেও এখন তাঁদের অধিকাংশের পদ-পদবি নেই।

যেহেতু আওয়ামী লীগ কোন আন্ডারগ্রাউন্ড বা ধর্মভিত্তিক বা নির্দিষ্ট শ্রেণীভিত্তিক দল নয় বরং ‘ওপেন ডোর’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী সেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির জোয়ারের সাথে খড়কুটোও অনেক সময় এসেই যায়। সবসময় সব খড়কুটো পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, সেটা হয়েও উঠে না। খড়কুটো আটকাতে গিয়ে জোয়ারের মুখে বাঁধ দেওয়া হবে, সেটাও গণমানুষের রাজনীতিতে কাম্য নয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের সুখের ইতিহাস খুব কম। গল্পে রাজার সুয়োরানী ও দুয়োরানীর ক্ষেত্রে দুয়োরানীকে যেমন সকল কাজ করেও বঞ্চিত হতে হয়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্যটাও তেমন। দলটির জীবনে জোয়ার যেমন এসেছে তেমনি বারবার এসেছে চরম ভাটা। ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানে যেমন আওয়ামী লীগ একাধিকবার গেছে তেমনি নাম নিশানা মুছে যাওয়ার অবস্থাও হয়েছে অনেকবার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কিংবদন্তী নেতা যেমন দলটির নেতৃত্বে ছিলেন তেমনি মোশতাকের মতো কুলাঙ্গারও দলটিতে থেকে রাজনীতি করে গেছে।

আওয়ামী লীগ একটি বড় ও ব্যস্ত দল। সমসাময়িক পৃথিবীতে অন্যতম বড় একটি মিছিলের নাম আওয়ামী লীগ। এই মিছিলে অনেকে আসে অনেকে যায়। ইতিহাস কাউকে স্মরণ রাখে, কাউকে রাখে না। কেউ দাগ রাখে আবার কেউ হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ কেউ নিজে দায়ী। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দায়ী নিয়তি।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*