প্রাণের ৭১

মৃতের সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে সন্তান, চলছে বিতর্ক

পরিস্থিতি এক, আবেদনও একই। তবে নির্দিষ্ট আইন না থাকায় পৃথক ফল পেলেন দুই প্রবীণ দম্পতি।

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর দু’বছর পরে তাঁর সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে সারোগেসি-র মাধ্যমে যমজ নাতি-নাতনি পেয়েছেন মহারাষ্ট্রের পুণের এক দম্পতি। অথচ, গত অগস্টে মৃত ২২ বছরের এক যুবকের শুক্রাণু সংরক্ষণ করার জন্য উত্তর-পশ্চিম দিল্লি-সংলগ্ন জৌন্তি গ্রামের বাবা-মায়ের আবেদন নাকচ করেছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)।

কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় জড়িত চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীদের যুক্তি, একই দেশে ব্যক্তি ও পরিবার-বিশেষে অধিকার ভিন্ন হতে পারে না। ২০০৩ সালে দেশের ‘অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি’ সেন্টারগুলির কাজে নজরদারি চালানোর উদ্দেশে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) একটি কমিটি তৈরি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে কমিটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ‘সারোগেসি রেগুলেশন বিল ২০১৬’-ও আলোর মুখ দেখেনি এখনও পর্যন্ত। ফলে দেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণ এবং সারোগেসির বিভিন্ন নিয়ম চলছে। কেউ সুবিধা পাচ্ছেন, আবার কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন।

পুণের রাজশ্রী ও নারায়ণ পাটিলের একমাত্র ছেলে, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রথমেশ কর্মসূত্রে জার্মানিতে থাকতেন। সেখানেই ২০১৩ সালে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। টেলিফোনে পুণে থেকে রাজশ্রী বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, স্টেজ ফোর। কেমোথেরাপি চালুর আগে প্রথমেশের শুক্রাণু ওর অনুমতি নিয়ে জার্মানিতেই সংরক্ষণ করা হল। ও অবিবাহিত ছিল।’’ এর পর ভারতে এসে আরও তিন বছর বেঁচেছিলেন প্রথমেশ। মারা যান ২০১৬ সালের অক্টোবরে, ২৭ বছর বয়সে। রাজশ্রী বলেন, ‘‘কিছুতেই ওকে ছাড়া বাঁচতে পারছিলাম না। তাই নিয়মকানুন মেনে ওর শুক্রাণু জার্মানি থেকে পুণেতে নিয়ে আসি। চিকিৎসক সুপ্রিয়া পুরানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাঁকে বলি, প্রথমেশের আত্মা আমার কাছে আছে, কিন্তু একটা দেহ আমার চাই। ওর শুক্রাণু থেকে নাতি বা নাতনি পেলে সেই দেহ আমার কাছে আসবে।’’

প্রথমেশের সংরক্ষিত শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণু-ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ডিম্বাণুর কৃত্রিম ভাবে মিলন ঘটিয়ে তৈরি ভ্রূণ প্রতিস্থাপিত হয় প্রথমেশের ৩৮ বছর বয়সি এক মাসির গর্ভে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি দু’টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে।

তা হলে এইমস কেন অনুরূপ আবেদন গ্রাহ্য করল না? এইমসের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘শুক্রাণু ব্যাঙ্কিং-এর নির্দেশিকা ও প্রোটোকল রয়েছে। কিন্তু মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া কোনও মানুষের দেহ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে, সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কোনও আইন ভারতে নেই। আমরা আইনি ঝুঁকি নিতে চাইনি।’’






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*