প্রাণের ৭১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ বাড়ানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর অরো চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করা উচিত।’ আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এই মত প্রকাশ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার প্রশংসা করেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে, শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার সরকারের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে মিলারকে অবহিত করেন।
বৈঠকের শুরুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, মার্কিন দূতাবাস পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জন্মশতবার্ষিকী কর্মসূচি সংশোধন করেছে। তিনি বলেন, সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মুজিব বর্ষের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ ও আবাসন নিশ্চিত করা… আমরা চাই একটি বাড়িও বিদ্যুৎ ছাড়া থাকবে না এবং মুজিব বর্ষের মধ্যে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’
প্রেস সচিব জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে একটি অ্যালবাম উপহার দেন, যাতে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বঙ্গবন্ধুর এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের ফটোগ্রাফ রয়েছে।
শেখ হাসিনা অ্যালবামটি দেয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান এবং রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস সচিব বলেন, এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
লিখাচেভ বলেন, যদি ভবিষ্যতে কখনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তবে তা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তাতেই সমাধান করা হবে।
তিনি তাঁর কোম্পানীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চমৎকার সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং মস্কোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা রোসাটম কতৃর্ক স্থানীয় প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ প্রদানে জোর দেন। এটিকে তাঁদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ খুব জরুরি, কেননা তাদের এই কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে এবং পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে তৎকালিন সৌভিয়েত ইউনিয়নের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া সবসময়ই আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’
রোসাটম মহাপরিচালক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল হাসান এবং ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্দার আই ইগনেটভ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে ফরাসি বুদ্ধিজীবী বার্নাড-হেনরি লেভীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
হেনরি লেভী ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো’র একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন বলে প্রেস সচিব জানান। হেনরি লেভীর বক্তব্য উদ্বৃত করে তিনি বলেন, ‘এটি হৃদয় থেকে লেখা একটি চিঠি এবং আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তব কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাই’।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হেনরি লেভী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি আমাদের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোঁ’র সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি আপনার দেশপ্রেমে অভিভূত।’ ফরাসি বুদ্ধিজীবী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে যোগ দিতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
আন্তর্জাতিক বিগ্রেডের এক সময়ের সদস্য হেনরি লেভী স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ফরাসি বুদ্ধিজীবী আরো বলেন, তিনি বাংলাদেশের ওপর একটি প্রামান্য চিত্র নির্মাণে আগ্রহী।
তিনি একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে যতটা সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহেরও পরামর্শ দেন।
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*