প্রাণের ৭১

লন্ডনে গঠিত বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশনকে বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়া হয়নি

লন্ডনে গঠিত বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশনকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতা এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি।
পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে।
এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত ‘কারণ’ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, আইন ও বিচারের প্রক্রিয়া স্বীয় গতিতে চলতে দেয়া হয়নি। প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকেও দায়ী করে কমিশন। সে সময়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডুকমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে।
এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস কিউ. সি. এমপি’র নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে এ আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়।
একই বছরের সেপ্টেম্বর স্যার থমাস উইলিয়ামসের সভাপতিত্বে হাউজ অব কমন্সের একটি কমিটি কক্ষে এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেফ্রি থমাস এবং সলিসিটর এ্যাব্রো রোজ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে কমিশন গঠন ও তার কর্মপদ্ধতি ঘোষণা করে ওইদিন অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
কমিশন বিভিন্ন প্রমাণ সম্বলিত দলিলপত্রাদি পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ হত্যাকান্ডগুলো অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত কতিপয় সামরিক অফিসারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তির দ্বারা সংগঠিত হয়।
এ ছাড়াও ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক ত্যাগ করার জন্য যে সমস্ত সামরিক বাহিনীর ব্যক্তিরা আলাপ-আলোচনা চালিয়েছিলেন তাদের তালিকা থেকে জড়িত অফিসারদের সনাক্ত করা হয়। পলায়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল ফারুক, লে. কর্নেল আব্দুর রশিদ, মেজর শরিফুল হক (ডালিম)। আপাতদৃষ্টিতে অভ্যুত্থানের নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় লে. কর্নেল ফারুক, লে.কর্নেল রশিদ ও মেজর শরিফুল হক ডালিমকে।
১৯৭৬ সালের ৩০ আগস্ট লন্ডন সানডে পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জেলখানায় ৪ নেতার হত্যার দায় স্বীকার করে কর্নেল ফারুকের যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেটিও আমলে নেয়া হয়।
কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে, আইন ও বিচারের প্রক্রিয়া স্বীয় গতিতে চলার পথে কি অন্তরায় রয়েছে সে সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্তের উদ্দেশ্যে কমিশনের একজন সদস্যের ঢাকা সফর করা আবশ্যক।
সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের সদস্য জেফ্রি থমাস, কিউসি একজন সাহায্যকারীসহ সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য ১৯৮১ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকা যাবেন। তারা এ লক্ষ্যে ঢাকা গমনের ভিসা লাভের জন্য তদন্ত কমিশনের সচিব ও সলিসিটর এ্যাব্রো রোজের মাধ্যমে দরখাস্ত পেশ করেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সময় মতো ভিসা প্রদান করা হবে বলার পর উল্লেখিত তারিখে সকালে ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজের সন্ধ্যায় ফ্লাইটের সুযোগ গ্রহণ করতে দেয়ার লক্ষ্যে অনুরোধ জানানো হয়। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায় যে, পাসপোর্ট ও ভিসা ওইদিন অপরাহ্নে ফেরত দেয়া হবে। অপরাহ্নে এগুলো চাওয়া হলে কন্স্যুলার বিভাগ বন্ধ বলে জানানো হয়।
পরবর্তী সময়ে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় যে, তারা জেফ্রি থমাসের ঢাকা ভ্রমণের জন্য ভিসা দিতে রাজি নয়।
ভিসা না দেয়ার ঘটনায় কমিশন এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, আইন ও বিচারের প্রক্রিয়া স্বীয় গতিতে চলতে দেয়া হয়নি এবং প্রক্রিয়াটিকে বাধা সৃষ্টি করার জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকেই দায়ী করা হয়।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*