প্রাণের ৭১

লিফট কেড়ে নিল ছোট্ট আলভিরাকে

সবার অনেক আদরের ছিল ৯ বছরের উম্মে আলভিরা রহমান। ছিল মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান। পরিবারের সঙ্গে ১৮ তলা ভবনে বাস করত এই প্রাণবন্ত শিশুটি। মা-বাবার সঙ্গে বাইরে খেতে যাচ্ছিল সে। ১৫ তলা থেকে নামতে তারা তিনজন হাসিমুখে উঠেছিল লিফটে। আর সেই লিফটই পরিণত হলো শিশুটির মৃত্যুফাঁদে। মা-বাবা লিফট থেকে নামতে পারলেও দ্রুত দরজা বন্ধ হওয়ায় আটকে যায় আলভিরা। দুই দরজা চাপ খেয়ে আটকে যাওয়া আলভিরাকে নিয়েই লিফট ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এতে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় শিশুটি। চোখের সামনে আদরের সন্তানের এমন মর্মান্তিক অবস্থা দেখে আর্তচিত্কার করা ছাড়া মা-বাবার কিছুই করার ছিল না। শেষে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি শিশু আলভিরাকে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শান্তিনগর মোড় এলাকার গ্রীনপিস নামের ১৮ তলা ভবনে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

শিশুটির স্বজন ও বাড়ির বাসিন্দারা অভিযোগ করছে, ত্রুটিপূর্ণ লিফটের কারণেই শিশু আলভিরার মৃত্যু হয়েছে। বহুতল ভবনটির লিফটগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চালানো হলেও দায়িত্বশীলরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শিশুটির মৃত্যুর পরও তারা নিজেদের দায় এড়াচ্ছে।

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, শান্তিনগরের গ্রীনপিস নামের অ্যাপার্টমেন্টে ১৫ তলায় থাকেন আলী বাবা ডোর কম্পানির মালিকের ছেলে শিপলু রহমান। শিশু আলভিরা তাঁরই মেয়ে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিপলু তাঁর স্ত্রী উম্মে সালমা রহমান ও মেয়ে উম্মে আলভিরা রহমানকে নিয়ে নিচে নামতে লিফটে ওঠেন। শিপলু ও তাঁর স্ত্রী লিফট থেকে নামলেও আলভিরা নামতে পারেনি। নামার সময় লিফটের দুই দরজার চাপে সে আটকে যায়। ওই সময় লিফটের সেন্সর কাজ করছিল না এবং ওপরে কল ছিল বলে শিশুটিকে নিয়ে লিফট ওপরে উঠে যায়। এতে তার মাথা ওপরে লিফটের ছাদের সঙ্গে বাড়ি খায়। পরে আলভিরাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি মাহমুদুল বলেন, এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। শিশু আলভিরার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে। উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে শিপলু রহমানের পৈতৃক বাড়িতে জানাজা শেষে গতকাল শিশুটির লাশ সেখানেই দাফন করা হয়।

ভবনের বাসিন্দারা অভিযোগ করছে, প্রায়ই সেন্সর নষ্ট থাকে বাড়ির লিফটগুলোর। কোনো লিফটম্যান নেই। ফ্ল্যাট মালিক সমিতি ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেউ বিষয়টি সমাধানে পদক্ষেপ নেয়নি।

মাহবুবুর রহমান ও সেলিনা রহমান নামের এক দম্পতি বলেন, লিফট দেখাশোনার জন্য একজন ছিল, সে হয়তো বাজারে ছিল। অথবা হাউসের কারো ফরমায়েশ খাটার জন্য গেছে। আলভিরা মারা যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই অন্য একটি লিফটে ১৫ মিনিট আটকে ছিল অন্য এক বাসিন্দা।

সোহেল নামের আরেকজন বলেন, নিচে নামার জন্য কল করলে অনেক সময়ই সেন্সর কাজ করে না। ওপরে উঠে তারপর ঘুরে আসে। লিফটের দরজার মধ্যে কেউ আটকে গেলেও চাপ দেয়। বড়রা শক্তি দিয়ে বের হতে পারলেও শিশুটি রক্ষা পায়নি।

তবে ভবন পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর মিয়া বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। নিম্নমানের লিফটের কারণে এ দুর্ঘটনা। এর আগে এমনটি হয়নি। লিফটের বয়স সাত-আট বছর হয়ে গেছে। এতে মাঝেমধ্যে সমস্যা হচ্ছিল। তবে লিফটের সার্ভিসিং ঠিক ছিল। লিফটম্যানও ছিল। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিনও ত্রুটির বিষয়ে আলাপ হয়েছিল। কী করা যায় তা সবাই বলছিল…।’ শিশুর মৃত্যুর দায় কার এমন প্রশ্নে আলমগীর মিয়া ফের বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা।’






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*