প্রাণের ৭১

শেখ মুজিবের সাথে কথা বলতে হবে……। কাজী নজরুল ইসলাম

তারিখ ১৯ শে জুন ১৯৬৮ সাল। ঘটনাক্রম – আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সামরিক আদালতে ১ নাম্বার আসামি বঙ্গবন্ধু অন্যদের বিচারের (এককথায় বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায়ের ) জন্য আদালতে বঙ্গবন্ধু সহ অন্য আসামিদের কাঠঘড়াইয় আনা হয়। সে সময় ওখানে কিছু সাংবাদিক উপস্থিত ছিলো। ছিলেন সাংবাদিক ফয়েজ আহমদও। জনাব ফয়েজ আহমদকে দেখে বঙ্গবন্ধু উনাকে ডাক দিলেন না শোনায় আবারো ডাক দিলেন তাও না শোনায় জোর গলায় ডাক দিলেন ‘ এই ফয়েজ’ বলে। তখন সাংবাদিক ফয়েজ বললেন মুজিব ভাই এখানে গোয়েন্দারা আছে আদালতে কথা বলা নিষেধ। এই কথা শুনে বঙ্গবন্ধু উচ্চস্বরে বললেন “ বাংলাদেশে থাকতে হলে শেখ মুজিবের সাথে কথা বলতে হবে………।“

এত কথা বলার একটাই কারন, এইদেশে কিছু কুলাঙ্গার আছে, ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে পারলে চিরতরে মুছে দিতে চায়। কারো মুখে বঙ্গবন্ধুর নাম শুললেই তাদের সারাঙ্গে জ্বালা ধরে যায়। ৭৫ এর পর এইদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া অঘোষিতভাবেই নিষিদ্ধ ছিলো। কেউ উনার নাম নিলে তাকে হত্যা বা জেলে দিতো গণতান্ত্রিক নামধারী সামরিক খুনি। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসকে নাজাত দিবস পালন করতো। এখনো অনেকেই জন্মদিন পালন করে। আবার এক বেয়াদপ পাকবন্ধু বলে উনাকে অপমান করারও চেষ্টা করে। অথচ এরাই ব্যাক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুকমা পেয়েছিলো। আজকে তারা সবাই এই বাংলাদেশে আগ্রহ্নযোগ্য বাতিল।

সময়ের আবর্তে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। ইতিহাস তার দায় শোধ করার জন্য বারবার আমাদের শিক্ষা দেয়। বর্তমান বাংলাদেশে কাউকে বঙ্গবন্ধুর গুনগান গাইতে বা উনাকে মুছে দিতে কে বাধ্য করেনা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সমস্থ আন্দোলন –সংগ্রাম, দাবী আদায়ের জন্য উচ্চারিত নাম হিসেবে এসে যান। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন আধীকার আদায়ের জন্য লড়েছেন। আজকের এই বাংলাদেশ অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে হয়। বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে হয়।
উদাহরন হিসেবে কয়েকটা উদাহরন দিই, এইযে গত কয়েকমাস আগে কোটা বিরোধী আন্দোলন হলো সেখানে তারা বঙ্গবন্ধুকে তাদের আইডল বানিয়ে আন্দোলন করলো। আবার সেই কোটা ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই……।

যে বিএনপি উঠতে বসতে বঙ্গবন্ধুকে পারলে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়, সেই বিএনপি ড কামালের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলে (!?) যেহেতু তাদের জোট নেতা কামাল সাহেব বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন। আরেক নেতা মনসুর সাহেব জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্যা শেষ করেন, মান্না-রবরাতো তাদের নেতা বলতে তারা বঙ্গবন্ধুকেই তাদের নেতা বলে, সেখানে অন্যকোন নেতা নেই। বিএনপিও তাদের আদর্শিক নেতার কথা বলেনা। এ এক আদ্ভুত রাজনীতি! এখানে এইসব জোট নেতাদের কেউ জোর করে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে বলেনি। বরং তারা সোচ্চায় বলছে। তাদের মানসিক ভাবে বাধা দিতে চাইলেও বিএনপি তা পারছেনা উলটা নিজেদের আদর্শিক নেতা অপেংতক হয়ে আছে।
এইতো আজকে দুইদিন আগে যুক্তফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর সংলাপ চেয়ে চিঠি লিখেছে। সেখানে তারা চিঠির শুরুতে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতর জনক’ বলে সর্ম্বোদন করেছে। জোটে থেকে সেই চিঠির প্রতিটি শব্দে বিএনপির নিচ্ছই সম্মতি আছে।

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হলে আওয়ামীলীগ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ভারতে গান্ধির কথা বলতে, আমাদের চিরশত্রু পাকিস্থানে জিন্নাহয়ের কথা বথা বলতে কাউকে তাদের দলের হতে হয়না। তেমনি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে বঙ্গবন্ধুর দলের হতে হয়না। শুধু মানষিকভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের হয়ে থাকলে হবে। বাংলাদেশের সব মানুষ আওয়ামীলীগ করবেনা। কিন্তু বাংলাদেশের সবদল বঙ্গবন্ধু করতে হবে।
তাই বাংলাদেশে থাকতে হলে শেখ মুজিবের সাথে কথা বলতে হবে।

লিখেছেনঃ কাজী নজরুল ইসলাম
অনলাইন,এক্টিভিস্ট



« (পূর্বের সংবাদ)



মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*