প্রাণের ৭১

স্মিথকে সরানোর নির্দেশ দিলো অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টার দায় স্বীকার করে নিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও ওপেনার ব্যানক্রফট।

বল টেম্পারিংয়ের দায় স্বীকার করলেও অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে জানিয়েছেন অজি তারকা স্মিথ। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরই স্টিভেন স্মিথকে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলেছে দেশটির সরকার। শুধু তাই নয় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল এই ঘটনাকে দুঃখজনক ও হতাশার বলে জানিয়েছেন।

কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় সেশনের সময় টিভিতে ধরা পড়ে, হলুদ কাপড়ের মত কিছু একটা পকেট থেকে বের করেছিলেন ব্যানক্রফট। পরে সেটি লুকানোর চেষ্টা করেন তার ট্রাউজারের ভেতরে। আম্পায়াররা অবশ্য তখনই ব্যানক্রফটের সঙ্গে কথা বলেন। তবে বলের অবস্থা পরিবর্তন হয়নি দেখে বল বদলাননি। ৫ রান পেনাল্টি দেওয়ার তাৎক্ষনিক শাস্তির পথেও হাঁটেননি।

তবে টিভির ফুটেজ রয়ে যায় কিছু একটা করার চেষ্টা প্রমাণ হিসেবে। দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কিছু আর লুকানোর চেষ্টা করেননি ব্যানক্রফট। বলেন, “ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে আমার। বলের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে আমাকে। লাঞ্চ বিরতির সময় আমাদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছিল। টেপ ব্যবহার করে, উইকেটের ক্ষত অংশের মাটির দানা ব্যবহার করে বলের কন্ডিশন বদলানো একটি সুযোগ দেখেছিলাম আমি। যদিও এটা কাজে দেয়নি। আম্পায়াররা তাই বল বদলাননি। আমার ছবি বড় পর্দায় ভেসে ওঠে। সেটা দেখেই আমি চেষ্টা করেছিলাম ট্রাউজারের ভেতর গুঁজে দিতে।”

বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টা করার সিদ্ধান্তটি যে দলীয় ছিল, সেটি স্বীকার করে নেন অধিনায়ক স্মিথ। বলেন, “লিডারশিপ গ্রুপ এটা নিয়ে জানত। লাঞ্চের সময় আমরা কথা বলেছিলাম। যা হয়েছে, তা নিয়ে আমি গর্বিত নই। খেলার চেতনার সঙ্গে এটি যায় না। আমার সততা, দলের সততা ও লিডারশিপ গ্রুপের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং সেটাই উচিত। অবশ্যই এটা করা উচিত হয়নি এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, আমার নেতৃত্বে আর এমন হবে না।”

“আমি নাম ধরে বলছি না, তবে লিডারশিপ গ্রুপ এটা নিয়ে আলোচনা করেছে। ব্যাঙ্গারস (ব্যানক্রফট) তখন সেখানে ছিল, আমরা আলোচনা করেছি এবং ভেবেছি যে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার একটি উপায় এটি হতে পারে। অবশ্যই সেটি কাজে দেয়নি। আম্পায়ারদের মনে হয়নি, বলের আচরণ বদলে গেছে। অবশ্যই তাই খুব বাজে পছন্দ ছিল এটি। আমরা এজন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত।”

টিভিতে দেখা যায়, ড্রেসিং রুম থেকে কিছু একটা ইশারা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন কোচ ড্যারেন লেম্যান। দ্বাদশ ব্যক্তি পিটার হ্যান্ডসকমকে মাঠে পাঠানোও হয়েছিল, হয়ত কোনো বার্তা দিয়ে।

তবে কোচদের সম্পৃক্ত থাকার কথা উড়িয়ে দিলেন স্মিথ। বলেন, “কোচদের কেউ সম্পৃক্ত ছিল না। ক্রিকেটার ও লিডারশিপ গ্রুপেরই ভাবনা এটা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আর হবে না। যতবার ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পারেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলছি যে আমার নেতৃত্ব এটা প্রথমবার হলো। আমরা অনুতপ্ত, এখান থেকে এগিয়ে যেতে চাই সামনে।”

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক জানান, বল রিভার্স সুইং করছিল না দেখে মরিয়া চেষ্টাতেই এই পথ বেছে নিয়েছিলেন তারা।

“আমরা দেখেছি, এই সিরিজে বল বেশ রিভার্স সুইং করেছে। তবে এবার মনে হচ্ছিলো না অতটা করবে। আমাদের দিক থেকে বড় ভুল হয়ে গেছে। খুব বাজে ব্যাপার হয়েছে। আবারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমার নেতৃত্বে এমনটি আর হবে না।”

“আমি বিব্রত। ড্রেসিং রুমে সবাই বিব্রত। দলের নেতা হিসেবে আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত। ধরা না পড়লেও আমি অনুতাপ করতাম।”

এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনে খুবই হতাশ ও মর্মাহত হয়েছি। এটা পুরোপুরি বিশ্বাসের বাইরে ছিল যে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল প্রতারণার সাথে জড়িত ছিল। এ নিয়ে আমি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান ডেভিড পেভারের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমি খুবই স্পষ্টভাবে এ ঘটনা সম্পর্কে আমার হতাশা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’

অস্ট্রেলিয়ার স্পোর্টস কমিশনের (এএসসি) চেয়ারম্যান জন ওয়েলি, এএসসি বোর্ড, সিইও কেট পালমার জানিয়েছেন দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

এদিকে এএসসি এক বার্তায় জানিয়েছে, ‘যে কোন ধরনের খেলায় প্রতারণার ঘটনাকে আমরা নিন্দা জানাই। অস্ট্রেলিয়া দল এবং ক্রীড়াবিদরা আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্বকারী। তাই কোনোভাবেই যাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

শুধু তাই নয় এএসসি স্টিভেন স্মিথের পদত্যাগেরও দাবি করেছে। তাদের মতে স্টিথের উচিত দ্রুত পদত্যাগ করা। পাশাপাশি কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে যারাই এই কর্ম-কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের সবার পদত্যাগ করা।

এরই মধ্যে আইসিসির অভিযোগের বাইরেও এই ঘটনা নিয়ে আলাদা করে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। প্রয়োজনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পথ বেছে নেবে বোর্ড, জানিয়েছে প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড।

তবে অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা ভাবছেন না স্মিথ। নিজের পদত্যাগ নিয়ে স্মিথ বলেন, ‘আমি পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছি না। আজ আমার দিক থেকে, লিডারশিপ গ্রুপের দিক থেকে ছিল বড় একটা ভুল। তবে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আমাকেই করতে হবে। আমি অবশ্যই অনুতপ্ত। এখান থেকে শিখে আমি ঘুরে দাঁড়াব।’

বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ যুগে যুগে উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধেই। শাস্তিও হয়েছে। তবে এভাবে প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করে নেওয়ার ঘটনা ক্রিকেটে বিরল।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*