প্রাণের ৭১

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ উৎসব মূখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ

শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মা মাছ দলে দলে নদীর তলদেশ থেকে উঠে এসে ডিম ছাড়া শুরু করে। রাত থেকে অপেক্ষায় থাকা হালদা পাড়ের পোনা সংগ্রহকারী সকাল থেকেই ডিম সংগ্রহ করছে।

হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৫০ জন পোনা সংগ্রহকারী ২৮০টি ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ডিম সংগ্রহ করছে। এবার তিনটি স্থানে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সেগুলো হলো আজিমের ঘাট, রামদাসহাট, নাপিতের ঘাটসহ অন্যতম।

হালদা নদী পরিদর্শন ও ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা উৎসব মূখর পরিবেশে নেট জাল পেতে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শত শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রকারীরা নদীতে অবস্থান নেয়। রাতে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলেও শুক্রবার সকাল থেকে পর্যাপ্ত ডিম জালে ধরা পরে।

আজিমের ঘাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী রোসাগীর জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় আশাব্যঞ্জক ডিম পেয়েছেন তিনি। একই এলাকার শাহাজান, মামুন, পরান জলদাশ, সাধন জলদাশ, পাভেল জলদাশ, প্রফুল্ল, সুবল, মুন্সী মিয়া, জাহাঙ্গীর, সেলিম ও বেলাল মিয়া আশানুরূপ ডিম সংগ্রহের কথা জানান।

রামদাশ হাট এলাকার চন্দন দাশ জানান, তার ৭টি নৌকা ডিম সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত ছিল। ৭টি নৌকা দিয়ে ১৪/১৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন।

হালদার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, সকাল ৬টার পর ভাটা শুরু হলে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। “ছয়টি নৌকা নিয়ে নদীতে আছি। অন্যবার এক বালতি বা দুই বালতি করে ডিম পেতাম একেকবার জাল টেনে। আজ ডিম উঠছে এক কেজি, দেড় কেজি করে। কোনো কোনো টানে ১৫০ গ্রামও পাচ্ছি। জোয়ার শুরু হয়েছে। হয়ত এখন কিছু ডিম পাব, সে আশায় সবাই নদীতে আছি।”

অংকুরিঘোনা এলাকার মিলন বড়ুয়া জানান, ৪টি নৌকা নিয়ে ১৫/১৬ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। গড়ে প্রতিটি নৌকা ৩/৪ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহের খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া পশ্চিম গুজরা, মাতুয়া, নাপিতের ঘাটা, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা, খলিফারঘোনা, বাড়িঘোনা, উরকিরচর এলকার বিভিন্ন স্পর্টে ডিম সংগ্রহের মহোৎসব চলে।

হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহের দৃশ্য সরেজমিনে পরিদর্শনে আসা রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ জানান, হালদা নদী পুরো বছর নজরদারীতে ছিল উপজেলা প্রশাসনের। যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় মা মাছ বেশী ডিম ছেড়েছে। তিনি বলেন, আমি ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলেছি। তারা প্রতি নৌকা ৫/৬ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। তারা খুব খুশি হয়ে বলেছে অনেক বছর পর হালদার মা মাছ আশার প্রদীপ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, এখনো (বেলা ২টা) ডিম সংগ্রহ চলছে। কি পরিমান জেলেরা ডিম সংগ্রহ করেছে কালকের মধ্যে জানা যাবে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহান লাভলী জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা আত্বতৃপ্তিতে ডিম সংগ্রহ করেছেন। শুরুতে ডিম কম হলেও এখন বেশি ডিম পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশাকরি গতবছরের মতই ডিম পাওয়া যাবে। তিনি আরো জানান, সমৃদ্ধি পথে হালদা নদী। দূষণ বন্ধ হয়েছে। সচ্ছ পানিতে নিরাপদে মা মাছ ডিম দিয়েছে। এখন দরকার মা মাছকে সুরক্ষা দেয়া। সেলক্ষ্যে নৌ পুলিশ পাহাড়ায় রয়েছে।

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এখনো পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম সংগ্রহ হয়নি।‘এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। পাহাড়ি ঢলও ছিল কম। দূষণ কম থাকায় আশা ছিল গতবারের চেয়ে ডিম বেশি পাওয়া যাবে। জোয়ারের পর ডিম সংগ্রহ শেষ হলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে।’

হালদায় দূষণ সৃষ্টি করা দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায়, লকডাউনের কারণে নদী তীরের শিল্প প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ থাকায়, বালুবাহী ড্রেজার চলাচল বন্ধ থাকায় এবং মা মাছ নিধন বন্ধে অভিযান জোরদার হওয়ায় এবার বেশি ডিমের প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের।
হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সকালের দিকে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। ডিম সংগ্রহ চলছে। জোয়ারের পর ডিম সংগ্রহ শেষ হলে সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদনের জন্য সরকারি বেসরকারি সব হ্যাচারি প্রস্তুতত আছে।”

গত বছর ২৫ মে রাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ, সংগ্রহ করা হয় ২৬ মে সকালে। প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে রেণু মিলেছিল ২০০ কেজি। ৮০ হাজার টাকা প্রতি কেজি রেণুর দর হিসেবে যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গতঃ হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফায় মোট ২৮০০ কেজি, ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ১৬৫০০ কেজি, ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ৪২০০ কেজি এবং ২০১২ সালে ২১২৪০ কেজি ডিম মেলে হালদায়। হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*