আ. লীগে উচ্ছ্বাস, বিএনপিতে বিভক্তি
![](https://www.praner71news.com/wp-content/uploads/2019/03/logo-71.png)
মনোনয়ন ঘোষণার পর গাজীপুর এবং খুলনায় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, বিএনপি হয়েছে বিভক্ত। গাজীপুর এবং খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই দলের প্রার্থী ঘোষণার পর আওয়ামী লীগে উচ্ছ্বাস আর বিএনপিতে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। দলে জনপ্রিয় এবং সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত আজমত উল্লাহর মতো প্রার্থীকে বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মতো তরুণ প্রার্থী বেছে নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে। আজমত উল্লাহ আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি দলের বিভক্তি না আনার নির্দেশ দিয়েছেন। দলের কর্মীদের ‘নৌকা’ প্রতীকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘আজমত উল্লাহ দলে বিভক্তি আনার মানুষ নন। উল্টো ফল হতো যদি তাঁকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতো। কারণ জাহাঙ্গীর আলমের দলের বাইরে একটা বলয় আছে। তারা এই মনোনয়ন মানতো না। এরা ‘নৌকা’র জন্য কাজ করে না, করে জাহাঙ্গীরের জন্য।’ স্থানীয় একজন নেতা জানালেন, ‘গাজীপুরে আওয়ামী লীগের বাইরে আরেকটা লীগ আছে সেটা হলো জাহাঙ্গীর লীগ।’ তাই জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ যেমন দলকে পাচ্ছে, তেমনি জাহাঙ্গীর লীগকেও পাচ্ছে। এর ঠিক উল্টো অবস্থা হয়েছে বিএনপির। ২০১৪ তে গাজীপুরের আবদুল মান্নান বিএনপির টিকেট পেয়েছিলেন। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি এক লাখের বেশি ভোটে আজমত উল্লাহকে পরাজিত করেছিলেন। মেয়র হওয়ার পর নানা মামলায় জড়িয়ে যান। তাঁকে মেয়র হওয়ার পর পদ থেকে অপসারণ করে সরকার। হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে পদ ফিরে পান তিনি। মেয়র হিসেবে তেমন কোনো কাজই করতে পারেননি তিনি। গাজীপুরের অনেকেই মনে করেন সরকারের বৈরীতার তিনি কাজ করতে পারেননি। এজন্য তাঁর প্রতি আলাদা সহানুভূতি আছে। তাছাড়া গাজীপুরে মান্নান পরিবারের আলাদা একটা বলয় আছে। গাজীপুরে মান্নান এবং হাসান উদ্দিন সরকারের বিরোধ দীর্ঘ এবং পুরনো। হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ার ফলে আবদুল মান্নান পন্থীরা যে নির্বাচনে উল্টো পথে হাঁটবে তা অনেকেই ধারণা করছেন। বিশেষ করে আবদুল মান্নানের জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি আলাদা কৃতজ্ঞতা আছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র পার্টি হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের কারণে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, এতে লাভ হয়েছিল মান্নানের। এবার কি মান্নান জাহাঙ্গীরের ঋণ শোধ করবেন?
খুলনাতে আওয়ামী লীগ ছিল কোন্দলে জর্জরিত। আর একারণেই দলীয় মনোনয়নে ফরম কেনেনই তালুকদার আবদুল খালেক। প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে বিরুদ্ধবাদীরা চুপসে গেছে। অন্যদিকে গত নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে নির্বাচনে জিতেছিলেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। তিনিও গাজীপুরের মেয়রের মতো যুদ্ধ করেই ৫ বছর কাটিয়েছেন। তাই এবার তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাশিত ছিল। মনি দলে জনপ্রিয় না হলেও, দলের বাইরে তাঁর পছন্দের লোকজন কম না। এরা কেউই দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর দিকে যাবে না। বিশেষ করে, এবার মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুব বেশি দলীয় এমন সমালোচনা তো থাকছেই।
সুবিধাজনক অবস্থান থেকে তাই দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ ভোট যুদ্ধে নামছে। কিন্তু এই সুবিধা কতদিন ধরে রাখতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়।