খোঁজ মেলেনি আইনজীবীর ক্ষোভে উত্তাল রংপুর
![](https://www.praner71news.com/wp-content/uploads/2019/03/logo-71.png)
রংপুরে নিখোঁজ আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার খোঁজ মেলেনি তিন দিনেও। গত শুক্রবার সকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে স্বজনদের উৎকণ্ঠা। অক্ষত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধারের দাবিতে গতকাল রবিবার রংপুরের আইনজীবীরা পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালনসহ বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেছেন। নগরীতে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এ ছাড়া রংপুরের উপজেলাগুলোতেও বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রথীশকে ‘অপহরণে’র প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। নিখোঁজ আইনজীবীর স্ত্রী দীপা ভৌমিক জানিয়েছেন, গত শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে কাজের কথা বলে তাঁর স্বামী পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি লাল মোটরসাইকেলে করে বাড়ির বাইরে যান; ব্যক্তিটিকে দীপা চেনেন না।
রংপুর আইনজীবী সমিতির আদালতে ডাকা পূর্ণদিবস ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে আইনজীবীরা গতকাল কোনো বিচারকার্যে অংশ নেননি। দুপুরে আদালত চত্বর থেকে মৌন মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। এ সময় বক্তব্য দেন রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু।
এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রংপুর জেলা শাখা এবং পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি বনমালী পাল ও ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ আফজাল। সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়, নিখোঁজ আইনজীবীকে উদ্ধার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারক লিপি দেন তাঁরা।
পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার নিখোঁজের ঘটনায় গতকাল আদালত এলাকায় বিক্ষোভ করেন রংপুরের আইনজীবীরা।
একই দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দুপুরে রংপুর টাউন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী মো. জুন্নুন অভিযোগ করে বলেন, ‘রথীশ শুধু আইনজীবীই নন, তিনি রংপুর জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিন দিনেও কেন তাঁকে উদ্ধার করা হলো না, আমরা তা জানতে চাই।’
এ ছাড়া জেলার গঙ্গাচড়া ও পীরগাছায় উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক এলাকায় বাবু সোনা নামেই পরিচিত। কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী ছিলেন তিনি। এ ছাড়া রংপুর বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে তিনি সরকারপক্ষে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে খাদেম হত্যা মামলায় গত ১৮ মার্চ সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছার পরদিন এই আইনজীবী নিখোঁজ হন। জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলায় সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবীও ছিলেন তিনি। এ মামলায় গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নগরীর ডিমলা রাজ দেবোত্তর এস্টেট নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে হামলা-মামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরের ১৭ জুন নগরীর ডিমলা রাজ দেবোত্তর এস্টেট পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রথীশ মামলাও করেন।
গতকাল দুপুরে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক নিখোঁজ আইনজীবীর আলমনগর বাবুপাড়ার বাসায় যান। তিনি স্বজনদের বলেছেন, সম্ভাব্য সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জঙ্গি মামলার তিনি পিপি ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতাসহ সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে