বিবিসির পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট – জুলাই আগস্টের যা যা অনুপস্থিত

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও থানায় হামলা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে ‘অসহায়, নিরীহ, শান্তিপ্রিয়’ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল এবং ৫২ জন মারা গিয়েছিল।
তবে প্রতিবেদন এটা উল্লেখ করা হয় নি যে ৫ আগস্টের আগে এই যাত্রাবাড়িতেই ছুটিতে থাকা একজন পুলিশ সদস্যকে কীভাবে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে পিটিয়ে মেরে ওভার ব্রিজ থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকি ৫ তারিখের আগে সারা দেশে পুলিশ সদস্য ও থানায় যত হামলা হয়েছিল তার কোন কথাই এই প্রতিবেদনে বলা হয় নি।
২০ শে জুলাই মোক্তাদির নামের একজন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মেরে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে উল্লাস করতে থাকে হামলাকারীরা। ট্যুরিস্ট পুলিশ কাউকে গুলি করার অনুমতি পায় কি না, বিবিসির সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে জানাতে পারেন। একই সাথে, ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে আন্দোলনরত সন্ত্রাসীরা। সেসময় ঘটনাস্থলে কতজন আন্দোলনকারী মারা গিয়েছিল, অনুসন্ধান করে দেখতে পারে বিবিসি। এরকম আরো বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে তারা। এরকম কোন ঘটনা, অর্থাৎ পুলিশের ওপর হামলার কোন ঘটনাই বিবিসির এই প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের ফরমায়েশ যখন হামলাকারীদের তরফ থেকে আসে তখন এমন একপাক্ষিক প্রতিবেদনই আসবে।
৬ই আগস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন জানিয়েছে সারাদেশে ৪৫০টি থানায় হামলা হয়েছে। এমন হামলার শিকার হলে সারাবিশ্বে যেকোন দেশের পুলিশের কথা বাদ দিলাম, যুক্তরাজ্যের পুলিশ কি ব্যবস্থা নেবে? বিবিসির বদ্ধমুল ধারনা যে তারা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন এবং হামলাকারীদের ফলাহার দিয়ে আপ্যায়ন করবেন।
প্রথম আলোর ২৩ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৬ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে ১১৩টি অগ্নিসগযোগের ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশের থানা। এছাড়াও রামপুরা টিভি ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন সহ বিভিন্ন সরকারী স্থাপনায় আগুন দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। এধরনের স্থাপনা হামলার শিকার হলে পৃথিবীর যে কোন সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তা অনুসন্ধান করে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে আশা করি।
প্রধান উপদেষ্টার সাবেক বিশেষ সহকারী ও ড ইউনুসের দ্বারা বর্নীত মাস্টারমাইন্ড মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই প্রকাশিত হয়েছিল যে জুনের ১ থেকে জুলাই ১৮ পর্যন্ত সবই ছিল পরিকল্পনার অংশ। তাহলে এই সময়ের মধ্যে সরকারি কেপিআই স্থাপনায় হামলাও কি পরিকল্পনার অংশ ছিল না? আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম টিভিতে বলেছেন যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো যদি পুলিশ না মারা হতো তাহলে আন্দোলন এত তীব্র আকার ধারন করত না, সফলতাও পেত না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিও ছিল তাদের। সেই অস্ত্রের উৎস কি সেটা বিবিসি অনুসন্ধান করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস আছে।
শুধু তাইই নয়, এসকল হামলার পরে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও যানবাহন এই কোমলমতি সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। ফায়ার সার্ভিস কি কাউকে গুলি করেছিল?
বিবিসির আলোচ্য প্রতিবেদনের মূল চুম্বক অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপ, যেখানে শেখ হাসিনার কন্ঠে একজনকে ‘লেথ্যাল উইপন’ ব্যবহারের নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে। বিবিসি’র দাবি তাদের সোর্স বলেছে এটা ১৮ জুলাইয়ের কথোপকথন। কিন্তু সেই সোর্স সত্যি বলছে কী না সেটা যাচাইয়ের কোন প্রমাণ বিবিসি দেয় নি। বিবিসি আরো বলছে এই ফোনালাপের সত্যতা নিশ্চিত করেছে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সকল সরকারি সংস্থায় রদবদল হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা গুলোও তাই। আর এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে এসেছেন তারা যাদের বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতি ও শৃংখলাভঙ্গের কারণে বিগত সরকারের সময় শাস্তি পেয়েছিলেন। সেই সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাদের কতটুকু বিশ্বাস করা যায়, সেটা এতদিনে বিবিসি বাংলার ধারনা হয়ে যাওয়ার কথা।
বিবিসি বাংলা এটাও প্রমাণ করতে পারেনি যে ফোনালাপে দেওয়া নির্দেশনা কাকে দেওয়া হচ্ছে। ফোনকল যদি আসলেই থেকে থাকে তাহলে সেটা পুর্ণাঙ্গ ফোনালাপ হওয়ার কথা, ফোনালাপের মাঝখান থেকে কল রেকর্ড করলে সেটা টের পাওয়া যায়। ফোনে কাকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটা আশাকরি বিবিসি বাংলা অনুসন্ধান করে বের করবেন।
বিবিসি আরো বলছে, ইয়ারশট নামে এক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তারা যাচাই করেছেন যারা বলছে এটা এডিটেড হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে তারা বলেনি এটা অসম্ভব। মজার বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে ডিপ ফেক এ আই প্রযুক্তি দিয়ে ভয়েস থেকে শুরু করে ফেসিয়াল ফিচার স্যামপ্লিং করে একেবারে সিনেমাও বানানো সম্ভব। শেখ হাসিনার ভয়েস স্যামপ্লিং করা এবং সেটার ব্যাকগ্রাউন্ডে উপযুক্ত শব্দ বসানো খুব একটা কঠিন বিষয় না।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই আন্দোলনকারী সন্ত্রাসীরা নরসিংদী কারাগারে হামলা চালায় যেখান থেকে ৯ জন জঙ্গিসহ ৮২৬ জন বন্দী পালিয়ে যায়। এই জঙ্গিরা ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোথায় ছিল, আন্দোলনের তাদের অংশগ্রহন ছিল কি না, কেনই বা আন্দোলনকারীরা কারাগারে হামলা করেছিল, এর পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিল, সেসব নিয়ে বিবিসি’র কোন প্রতিবেদন দেখা যায় নি। তবে হিজবুত তাহরীর, পাকিস্তানি লস্কর-ই তৈয়েবা এই আন্দোলনে তাদের ভুমিকা বুক ফুলিয়ে স্বীকার করেছে। আন্দোলনের নাশকতায় তারা অংশ নিয়েছিল কি না সেটা ভেবে দেখতে পারেন সাধারণ মানুষ, বিবিসি চাইলে অনুসন্ধান করেও দেখতে পারে। এধরনের সন্ত্রাসীরা যদি পালিয়ে যায়, অস্ত্র লুট করে এবং সরকারি স্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালায় তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী এদের দমন করতে কি নির্দেশনা দিবে, সেটা আমরা বিবিসি’র কাছ থেকে জানতে চাই।