শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া মৌলিক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
এইচআরডব্লিউ বলেছে, এমন গুরুতর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শুধু নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচার প্রক্রিয়ার পর দায়ী করা উচিত।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করেছে কিনা তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউ একটি প্রেস রিলিজে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করেনি, যার মধ্যে রয়েছে পূর্ণ আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার, সাক্ষীদের প্রশ্ন করার অধিকার এবং নিজের পছন্দের আইনজীবী নির্বাচন করার অধিকার।
গতকাল (১৭ নভেম্বর), ট্রাইব্যুনাল দুইজনকেই ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। উভয়ের অনুপস্থিতিতে মামলা করা হয়েছিল ও তাদের পছন্দ মতো আইনজীবীদের দ্বারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি।
তৃতীয় অভিযুক্ত, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, ‘হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দীর্ঘ ক্রোধ ও ক্ষোভ রয়েছে। তবে সব অপরাধমূলক বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে হবে।’
সংগঠনটি আরও বলেছে, এমন গুরুতর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শুধু নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচার প্রক্রিয়ার পর দায়ী করা উচিত।
হাসিনা ও কামালের পক্ষে সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা অভিযুক্তদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি এবং কোনো প্রতিরক্ষা সাক্ষীও হাজির করেননি।
মানবাধিকার সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে, আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা হলে তা ন্যায্য শুনানির অধিকার লঙ্ঘন করে। আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ নং অনুচ্ছেদে এই অধিকারটি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, প্রত্যেকের সশরীরে উপস্থিত থাকা, আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া, প্রমাণ পেশ করা এবং সাক্ষীদের জেরা করার অধিকার রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) জানিয়েছে যে, “মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।” সংস্থাটি সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে এবং এটিকে “স্বাভাবিকভাবেই নিষ্ঠুর” বলে আখ্যা দেয়।
ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা নিয়ে তারা বেশি উদ্বিগ্ন
এইচআরডব্লিউ উল্লেখ করেছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ট্রাইব্যুনাল ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। এমনকি শেখ হাসিনার সরকারের সময়ও রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক এবং অন্যায়ভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও এই ধরনের চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ অভিযুক্তদের সুরক্ষার ওপর জোর দিয়েছে
এইচআরডব্লিউ বলেছে যে, সরকারের উচিত সব অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে সংবিধানের ৪৭(৩) এবং ৪৭ক অনুচ্ছেদে বাতিল করা সুরক্ষাগুলো পুনর্বহাল করা এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আপাতত বন্ধ (মোরাটরিয়াম) রাখা।
‘প্রত্যর্পণ হতে হবে আইনি প্রক্রিয়া মেনে’
রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে যে, প্রত্যর্পণ কেবল তখনই হওয়া উচিত যখন তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলে হবে। আর যদি দেখা যায় অভিযুক্তের বিচার ন্যায্য বিচারের নীতি লঙ্ঘন করবে বা তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে প্রত্যর্পণ করা উচিত নয়।
এইচআরডব্লিউ শেষে বলেছে, “শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। এটি অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন এবং ন্যায্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মানে হলো অভিযুক্তের অধিকার রক্ষা করা,
