প্রাণের ৭১

জান্নাত পেতে হলে আগে মানবিক হতে হবে!

যাকাতের নিয়ম হলো আরবী মাসের হিসাবে বছরের যে কোনো একটি দিন আপনি নিজের যাকাত হিসাব দিবস হিসাবে নির্ধারণ করবেন। এবং পরবর্তী প্রতি বছর সেদিনটিতেই যাকাত হিসাব করবেন। আর এ দিনের স্থিতিই আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদ। বছরের অন্য সময় আপনার কাছে অর্থ সম্পদই আসুক বা যাক হিসাব করে করে সেসবের যাকাত দিতে হবে না, কেবল যাকাত হিসাব দিবসের সম্পদই যাকাতযোগ্য।

যাকে শরীয়ত ‘হাওলানে হাওল’ অর্থাৎ, সম্পদের বর্ষপূর্তি বলে। মানে যে সম্পদ এক বছর আপনার দখলে থাকে। যাকাত দেওয়ার দিন সেগুলির যাকাত দিতে হয়। সেদিন আপনার নিজের নগদ টাকা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বন্ড, শেয়ার ডিবেঞ্চার, স্বর্ণ-রূপা, ব্যবসা পণ্য, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা জমি-ফ্ল্যাট ইত্যাদি সবকিছুর সেদিনকার বাজার মূল্য হিসাব করে যত হয় তার ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ২.৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন একলাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা।

৪০ লাখ টাকার যাকাত একলাখ টাকা। যাকাতের সর্বনিন্ম নেসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর যে কোনোটির সমান মূল্যের টাকা অথবা ব্যবসা পণ্য। নিজের ব্যবহারের বাড়ি, আসবাবপত্র, গাড়ির ওপর যাকাত নেই। উপার্জনের মাধ্যম, শিল্প কারখানার জমি, মেশিনপত্র ইত্যাদিতে যাকাত আসে না। ভাড়া দেওয়া বাড়ি, দোকান, ট্রান্সপোর্ট এসবের আয়ের ওপর যাকাত আসবে কিন্তু মূল সম্পত্তির ওপর যাকাত নেই। যদি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাস, ট্রাক, কার ইত্যাদি বিক্রয়ের জন্য রাখে তাহলে ব্যবসা পণ্য হিসাবে এসবের ওপরও যাকাত আসবে।

ঋণ, পাওনা টাকা, ফসলি জমি, বাগানবাড়ি ইত্যাদি বিষয়ক মাসআলা নিকটস্থ বড় মাদরাসার ফতোয়া বিভাগ বা প্রাজ্ঞ মুফতির নিকট থেকে জেনে নেওয়া ওয়াজিব। যাকাত কেবল নিজের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের দেওয়া যায় না। এছাড়া যাকাত নেওয়ার উপযুক্ত চাচা-মামা, ভাই-বোন ইত্যাদি সকল আত্মীয়কে দেওয়া যায়। যাকাত দেওয়ার সময় গ্রাহককে বলে দেওয়া মোটেও জরুরী নয়। বরং যাকাত না বলে গিফট, ঈদ উপহার, সৌজন্য বা সহায়তা ইত্যাদি যে কোনো শোভনীয় কথা বলে দিয়ে দেওয়াই উত্তম।

এতীম শিশু ও অসহায় বিধবা মুসলিম জাতির আমানত। আয়হীন গরীব মানুষ, ঋণে জর্জরিত লোক, কারাগারে বন্দীর পরিবার, আকষ্মিক রোগব্যধিতে আক্রান্ত দুঃখী মানুষ, সন্তানহীন বৃদ্ধ ও অথর্ব বয়স্ক নারী পুরুষ আপনার দানের অপেক্ষায়। এদের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার মতো তাদের যাকাত দিন। যারা সাধারণ দান পেলে বিপদমুক্ত হয় তাদের দান-সাদাকাহ করুন। পবিত্র রমজানে নফল দান ফরজের সমান সওয়াব নিয়ে আসবে।

আর যাকাতের সওয়াব হবে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তুর গুণ। নবী করিম সা. বলেছেন, এতীম ও বিধবার জন্য যে কষ্ট করে জীবিকা অর্জন করে তার মর্যাদা সারাদিন রোজা রাখা ও সারা রাত নামাজে দাঁড়িয়ে কাটানো লোকের সমান। -আল হাদীস। মহানবী সা. আরও বলেছেন, আমি (মোহাম্মদ সা.) ও এতীমের লালনকারী জান্নাতে পাশাপাশি থাকবো। (তিনি সা. তখন হাতের দু’টি আঙ্গুল একসাথে মিলিয়ে দেখান, এভাবে একসাথে থাকবো।) -আল হাদীস। রমজানের দিনগুলি দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুমিনদের মনে এখন রমজানকে বিদায় দেওয়ার কষ্ট। এসময় নিজের সম্পদের যাকাত হিসাব করে প্রার্থীদের দিয়ে দেওয়া উত্তম। যদি দেওয়া শেষ না হয়, পরেও তা সারা বছর দেওয়া যাবে। কিন্তু রমজানে হিসাব করে নিয়ত করে নিলে পরেও সত্তুর গুণ সওয়াব পাওয়ার আশা থেকে যায়।

সামনে ঈদ। যদি প্রতিটি ফিতরার মূল্য গম (টাকায় ৭০/-), যব (টাকায় ৬০/-), পনির (টাকায় ১৭৫০/-), কিসমিস (টাকায় ১৪০০/-), মনাক্কা (টাকায় ১০৫০/-), খেজুর ( কোয়ালিটি ভেদে টাকায় ৭০০/- থেকে ১০৫০০ পর্যন্ত) বা আরো বেশি ইত্যাদি সাড়ে তিনসেরের দাম নিজে বাজারদর হিসাব করে অথবা আলেমদের দেওয়া তথ্য মতে (শুধু গমের বেলা পৌনে দুইসের) হিসাব করে ধনীরা দিয়ে দেয় তাহলে পরিবারের ছোট বড় সকলের পক্ষ থেকে বহু টাকা একান্ত গরীবরা পায়। যেমন, ছয় সদস্যের একটি পরিবার কমপক্ষে ষাট টাকা থেকে ফিতরা শুরু করে।

আর সাধ্যমত কোনো পরিবার তার প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে পনির, কিসমিস, মনাক্কা, খেজুর এসবের সাড়ে তিনসের পণ্যের মূল্য যত হয় তত করে দ্রæত দিয়ে দেন, উল্লেখ্য যে, যিনি মোটামুটি সচ্ছল তিনি ফিতর দিবেন। অভিভাবক তার পোষ্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা দিবেন। ফিতরা শিশুদের পক্ষ থেকেও দিতে হয়, এমনকি ঈদ পূর্ব রাতে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে গার্জিয়ান তার পক্ষ থেকেও ফিতরা দিবে। ফিতরা দেওয়ার শেষ সময় ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে।

ইচ্ছে করলে গরীবদের সুবিধার্থে রমজানেও দিয়ে দেওয়া যায়। তাহলে বঞ্চিত লোকেরা ঈদের খুশিতে অংশ নিতে পারবে। এ হচ্ছে ওয়াজিব দান। যাকাত-ফিতরা ছাড়াও নিজের হালাল মূল তহবিল থেকে মহব্বতের শায়েখ, আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, ভদ্র দরিদ্র পরিবার, অসচ্ছল বন্ধ-বান্ধব, চেনা-জানা মানুষ, প্রতিবেশি, সহকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারী, কাজের লোক, ড্রাইভার-দারোয়ান প্রভৃতি সার্কেলে ঈদের বাজার, খাদ্য ও পোষাক উপহার হিসাবে দেওয়া খুবই উত্তম। এতে প্রচুর সওয়াবের পাশাপাশি সামাজিক মিল-মহব্বত দৃঢ় হয়। শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, চেহারায় নূর, সুখী জীবন, দীর্ঘায়ু ও অপরিসীম আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করা যায়।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*