আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব : আদালতের পর্যবেক্ষণ
            
                     
                        
       		আসামীদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে বলে আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।
ভয়াবহ ও বর্বরোচিত ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা মামলার রায়ে আদালত আজ বুধবার এ পর্যবেক্ষণ দেয়।
পর্যবেক্ষনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রক্ত ও মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে।আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতি একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়।অপরদিকে, ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তি, এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে।
স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে রোধ করে। অগ্রগতির চাকাকে পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ও লাল সবুজ পাতাকাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।
পর্যবেক্ষনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার বন্ধের প্রচেষ্টা চালানো হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২৩ বছর ২ মাস পর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি হত্যার দায় থেকে কলঙ্কমুক্ত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর চার জাতীয় নেতাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতাকে হত্যার পরও কিন্তু ষড়যন্ত্র অব্যহত থাকে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শনিবার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করানো হবে’- এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় হামলা করে।
পর্যবেক্ষনে বলা হয়, তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের সামনে যুদ্ধে ব্যবহৃত বিশেষায়িত মারণাস্ত্র, আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয়।
পর্যবেক্ষনে আরো বলা হয়, রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধীদলকে নেতৃত্ব শূন্য করার প্রয়াস চালানো কাম্য নয়। আদালত সিলেটে হয়রত শাহজালাল (রহঃ) এর দরগা শরীফের ঘটনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলার, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলার এবং অত্র মোকদ্দমার ঘটনায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি চায় না।
পর্যবেক্ষনে বলা হয়, গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে জখম- আহত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসার পরও এখনো অনেকে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। তাদের চোখে ঘুম নেই, গ্রীষ্ম বা শীত সব সময়ই শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন।তাদের পরিবারের সুস্থ সদস্যগণও প্রাণহীনভাবে বেঁচে রয়েছেন।
পর্যবেক্ষনে বলা হয়, ‘সার্বিক পর্যালোচনার দেখা যায়, মূল ঘটনার পূর্বে বিভিন্ন ঘটনাস্থলে অত্র মোকদ্দমার আসামীগণ অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সভা করে পরিকল্পিতভাবে অত্র মোকদ্দমার ঘটনাস্থল ২৩ নং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সামনে ঘটনার তারিখ ও সময় মারাত্মক সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা করে ও শতাধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করে মর্মে আসামীগণের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আসামীগণকে শাস্তি প্রদান করা যুক্তিসঙ্গত বলে আদালত মনে করেন।’
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে আজ রায় দিয়েছে আদালত। এছাড়া মামলার অন্য ১১ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় আজ রায় দেন।
মামলায় ৪৯ আসামীর সকলেই বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। এর মধ্যে কারাবন্দি ৩১ আসামীকে আজ এজলাসে হাজির করা হয়। বাকী ১৮ আসামী এখনো পলাতক।
