প্রাণের ৭১

আজ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জেনারেল মনজুর হত্যা দিবস।

১৯৮১ সালের ২ জুন মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টর কমান্ডার জেনারেল মনজুর বীরউত্তম’কে স্বৈরাচারী সেনাপ্রধান এরশাদের নির্দেশে ক্যাপটেন এমদাদের নেতৃত্বে একদল বিপথগামী সৈনিক চট্টগ্রাম সেনানিবাসে গুলিকরে হত্যা করে। তাঁর বিরুদ্ধে জিয়া হত্যার মিথ্যা অপবাদ তোলে স্বয়ং এরশাদ।

 

এরশাদ পাকিস্তানের দেয়া নীল নকশা অনুযায়ী মনজুর সহ সেনাবাহিনীতে থাকা ৫০জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে সামরিক ট্রাইবুনালে বিচার নামক প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার ছুটিতে থাকা সত্বেও তাদেরকে গ্রেফতার করে এনে জিয়া হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে সামরিক ট্রাইবুনালে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এসব মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়নি। তাদের মৃত্যু ছিলো সরাসরি হত্যাকান্ড এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

 

প্রসংগত উল্লেখ্য যে, এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বাঙালি সেনা অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারে গঠিত পাকিস্তান সামরিক ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান ছিলো। এরশাদ স্বাধীনতার পরে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু তিনি ফেরেন পাক সেনাবাহিনীর কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়নে।মনজুর  হত্যাকান্ড ছিলো তারই অংশ। এরশাদ সেনাবাহিনীতে একমাত্র মনজুরকে বেশী ভয় পেত। কেননা মনজুর জীবিত থাকলে তার পরবর্তী ফরমুলা গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিলোনা। তাছাড়া জিয়া- এরশাদ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তান পন্থী একটি গ্রুপ গঠন করে ফেলেছিলো যার প্রচন্ড বিরোধী ছিলেন জেনারেল মনজুর।

 

মনজুর’কে খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই এরশাদ চট্টগ্রামকে জিয়া হত্যার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয় এবং পাকিস্তান ফেরত কিছু সেনা অফিসার দিয়ে প্রথমে জিয়া এবং পরে মনজুরকে হত্যা করে। মনজুর তখন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের জিওসি ছিলেন।

 

৭১  সালে জেনারেল মনজুর এর পোস্টিং ছিলো  পাকিস্তানে। তিনি ২৫ মার্চের পরই সুযোগ খুজছিলেন বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে স্ত্রী সন্তান সহ পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে বারোশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। অতঃপর  মুজিব নগর সরকার তাকে ৮ নং সেক্টরের দায়িত্ব প্রদান করেন। মনজুর ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন দক্ষ দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার। এরশাদ ছিলো ধুর্ত ও চতুর। তাছাড়া সেনাবাহিনীতে মনজুর ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় মেধাবি ও দক্ষ। অধিক যোগ্যতা থাকা সত্বেও জিয়া মনজুরকে সেনাপ্রধান না বানিয়ে পাকিস্তানের পরামর্শে এরশাদকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে নায়ক মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশ কারি পাকিস্তানি এজেন্ট খুনি জিয়া তার শাসনামলে  বিভিন্ন বাহিনী থেকে সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সৈনিককে খুন করেছিলো। তারপর সকল রাজাকারদের শতভাগ পুনর্বাসন তিনি করেছিলেন।  বাকি মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের পাকিস্তানি ‘আইএসআই’  এরশাদকে দিয়ে খুন করিয়েছিলো।

 

জেনারেল মনজুর এর জন্ম ১৯৪০ সালে ব্রাম্মনবাড়িয়ার কসবায়। মনজুর হত্যার ১৪ বছর পর আওয়ামীলীগে শাসনামলে তার ভাই জেনারেল এরশাদকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রামের পাচলাইস থানায়। বিস্ময়কর ঘটনা হলো এইযে, তিন দফায় দশ বছর ২মাস ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি বা খালেদা সরকার জিয়া হত্যার বিষয়ে সম্পুর্ন নিশ্চুপ থেকেছে। তথ্যসুত্র বলছে, এরশাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলা হোক সেটা পাকিস্তান এবং সৌদি আরব চায়নি। বেনপি এরশাদের বিরুদ্ধে  পদক্ষেপ নিলে বেনপির উপর থেকে তারা সমর্থন তুলে নেবে এমন কথাও সাফ জানিয়ে দেয়। ফলে জিয়া হত্যার বিচারে তারা চুপ থেকেছে।

মনজুর হত্যা মামলা আজো বিচারাধীন রয়েছে।আমরা অবশ্যই বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চাই।

আসাদুজ্জামান আসাদ  লেখক, সাংবাদিক

 

 

 

 

 

২ জুন ২০২০,ঢাকা






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*