প্রাণের ৭১

চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য এক হাজার বেড প্রস্ততঃ এ আঁধার কেটে যাবে..

মোহাম্মদ হাসানঃ বৈশ্বিক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি করোনায় চিকিৎসায় বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও যখন নাকাল।সেই সাথে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার সুযোগ বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কাছাকাছিতে ঠেকেছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা ১২০ জন ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা চট্টগ্রামে প্রাত্যহিক একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা রোগীর জন্য হাসপাতালের একটি সিট পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। দিন কয়েক আগে শুধুমাত্র জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। সেখানে ১০০ বেড এবং ১০টি আইসিইউ নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছিল। এর পাশাপাশি ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডির ৩০ বেড এবং ফৌজদারহাট ফিল্ড হাসপাতালের ৪৪ বেড ছিল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জায়গা। এতে করে বেড সংকট, অক্সিজেন সংকট, আইসিইউ সংকট এবং ভেন্টিলেটর সংকটসহ নানা সংকটে চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ অনেকটা সোনার হরিণ হয়ে উঠেছিল। বিনা চিকিৎসায় বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ব্যবসায়ী শিল্পপতি চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন চিকিৎসার অভাবে। অক্সিজেনের অভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারেননি বহু মানুষ।ঠিক সে সময়ে কিছুটা স্বস্তির খবর প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা সুযোগ ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে করোনা চিকিৎসায় বর্তমানে প্রায় এক হাজার বেড প্রস্তুত রয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা ভোগান্তি দ্রুত কমে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩১৭ জন রোগী করোনা চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধা আরো বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আদালতের নির্দেশে ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা শুরু করলে সুযোগ আরো বাড়বে। এর ফলে ক্রমান্বয়ে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে করোনা চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল, শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালেও (ইউএসটিসি) চলছে করোনা চিকিৎসা। টাকা পয়সা খরচ করে হলেও এই হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা জুটছে। চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য বেশ বড় অবলম্বন হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন নগরীর আগ্রাবাদস্থ সিটি সেন্টার নামের কমিউনিটি সেন্টারে ২৫০ বেডের একটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করছেন। এর বাইরেও ছোটখাটো পর্যায়ে আরো অনেকগুলো আইসোলেশন সেন্টার চালু হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অঙিজেন সাপোর্ট রয়েছে। এখানে রোগীদের প্রয়োজনীয় অঙিজেন সাপোর্ট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে আইসিইউর সীমিত সুবিধাও। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অঙিজেন সুবিধা না থাকলেও প্রয়োজনীয় অঙিজেনের যোগান দেয়া হচ্ছে সরকারি বেসরকারিভাবে। ইতোমধ্যে এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অঙিজেন সরবরাহ সিস্টেম চালু করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় আশি লাখ টাকা খরচ করে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অঙিজেন সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অঙিজেন না থাকলেও পর্যাপ্ত অঙিজেনের যোগান রয়েছে। ইতোমধ্যে এই হাসপাতালে হাই ফ্লো অঙিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল বা হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে কিছু সমস্যা থাকলেও করোনা রোগী ভর্তি এবং অঙিজেন সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি ফিল্ড হাসপাতালে অঙিজেনের যোগানসহ করোনা চিকিৎসা চলছে।
আদালত চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ কার্যকর হলে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহের দিকে এই হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসা প্রদান করা হবে। অন্যান্য হাসপাতালগুলোও ক্রমে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে বর্তমানে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রায় এক হাজার বেড করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত বলে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল চট্টগ্রামের একটি জাতীয় দৈনিকে বলেন, এক হাজার বেড তৈরি হয়েছে। আপাতত এটি পর্যাপ্ত। চট্টগ্রামে বর্তমানে কোনো করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে সিটের অভাব হচ্ছে না। করোনা রোগীর জন্য অঙিজেনেরও সংকট হবে না। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয় না। শত শত রোগী ঘরে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে যাদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে তারা দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন। তিনি চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সুবিধা আরো বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করেন। সিভিল সার্জন বলেন, আপাতত আমরা শুধুমাত্র মেয়র সাহেবের আড়াইশ’ বেডের আইসোলেশন সেন্টারের অনুমোদন দিয়েছি। এটির সফলতার উপর পরবর্তীতে অন্যান্যদের অনুমোদনের বিষয়টি ভাবা হবে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
তবে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত হলেও করোনা উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করাটাই কঠিন হয়ে উঠেছে বলে স্বীকার করে সংবাদ মাধ্যম ব্যাক্তিদের মতামত প্রকাশ করে চট্টগ্রামের একাধিক চিকিৎসক বলছেন, কোনটি করোনা রোগী আর কোনটি করোনা নয়, তা নিশ্চিত হওয়ার আগে চিকিৎসা দেয়াটা আসলেই কঠিন। করোনা রোগীকে সাধারণ রোগীর কাছে নেয়া যাচ্ছে না, আবার সাধারণ রোগীকে নেয়া যাচ্ছে না করোনা রোগীর কাছে। অনেক ডাক্তারই চিকিৎসা সেবা দিতে রাজি হচ্ছেন না। এতে করে সংকট তৈরি হচ্ছে। যা নিকট অতীত দিনগুলোর কঠিন বাস্তবতা।

তবে আশাজাগানিয়া সংবাদ জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার সেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, সবাই যাতে চিকিৎসা সেবা পান তা সুনিশ্চিত করতে সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি অচিরেই এই সংকটও কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অবশ্যই বর্তমানে এই করোনার বিষাক্ত ছোবল হতে মুক্তি পায়নি সারা বিশ্ব তথা ২১৩/১৪ টি দেশ। চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়ে অতি প্রাচুর্যশালী দেশগুলোর ও নাকাল দৃশ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই দেখেছেন বিশ্ববাসী। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়,”এ আঁধার কেটে যাবে,নতু সূর্য…..।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*