প্রাণের ৭১

ছাত্রলীগ আমার যৌবনের প্রথম প্রেম,প্রেরণার উচ্ছাস: রেজাউল করিম খোকন

আমার যৌবনের প্রথম প্রেম, প্রেরণার উচ্ছ্বাস,উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজ জন্মদিন। গৌরবের সংগঠনের জন্মদিনে নিরন্তর শুভেচ্ছা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানের কোটি কোটি নেতাকর্মীকে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ঘাতকের হাতে নিহত শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাই ছাত্রলীগের সব প্রয়াত নেতাকর্মীকে।

বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা হওয়া এই ছাত্রলীগের বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের উন্মেষকাল মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন ‘মহান ভাষা আন্দোলন’ এ নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে রক্তাক্ত ও সংগ্রামী যাত্রা পথের সূচনা হয়। এরপর থেকে সংগঠিত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ তার এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সফল হয়। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী, শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ছাত্রলীগের গৌরবদীপ্ত ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা আজ সর্বজনস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ ৷১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অবদান ছাত্রলীগের ইতিহাসকে দান করেছে অনন্য বৈশিষ্ট ৷ জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রলীগ একটি সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে ওতোপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত করতে অত্যন্ত সফলভাবে সমর্থ হয়।

একটি সংগঠন হিসেবে দুর্জয়ী কাফেলায় পরিণত হয়েছে। এজন্য হারাতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। সংগঠনের অসংখ্য শহীদ, অগণিত নেতাকর্মীর জেল-জুলুম-কারাবরণ, নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ, আর নেতা-কর্মীদের এক নদী রক্তের বিনিময়ে রচিত হয়েছে এক সফল রক্তাক্ত ইতিহাস ও স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে প্রথমে খুনি মোশতাক সরকার ও পরে সামরিক স্বৈরাচার খুনি জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলেও জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হয়ে অগণিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কারাবরণ, দেশত্যাগ, অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।

তারুণ্যের উচ্ছ্বল প্রাণবন্যায় ভরপুর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা দেশের ইতিহাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, লড়াই করেছেন প্রতিটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। ঠিক এই কারণেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালি জাতির ইতিহাস-বাংলাদেশের ইতিহাস’।

বাংলা এবং বাঙালির প্রায় সাত দশকের বেশি সংগ্রাম, গৌরব এবং সাহসের সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশিদার এই ছাত্র সংগঠনটি। জাতির ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এদেশের মানুষকে লাল সবুজের একটি পতাকা, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- জাতীয় সঙ্গীত, ও স্বাধীন ভূখন্ডের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮ হাজার নেতাকর্মী শহিদ হন। মেধাবী ও আধুনিকমনা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেশে আবারো প্রজ্বলিত হবে ছাত্রলীগের গৌরব কথা, ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা। ছাত্রলীগ মানেই গভীর দেশপ্রেম, আদর্শবোধ ও ত্যাগের মহিমায় পড়াশোনার পাশাপাশি জাতি গঠনে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখে যাওয়া একটি সাহসী ছাত্র সংগঠন। যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। ছাত্রলীগের যে ত্যাগ, যে অর্জন তা অন্য কারো নেই। ছাত্রলীগের ইতিহাস ছাত্রলীগই। ছাত্রসমাজের নেতৃত্বদান কারী এই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাতালগ্ন থেকেই ছিল গৌরবদীপ্ত ও মহিমান্বিত্ব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন, আরো গতিশীলতা দিয়েছেন, করেছেন শক্তিশালী। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাত্রদের হাতেই তুলে দিয়েছেন।

ছাত্রলীগ শুধু বিরোধী দলেই নয়, মূল দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও ছাত্রলীগ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছে। যখনই অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, তখনই রাজপথে সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগ।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যখন ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছিল, তখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলেন। মেধাবীরাই ছাত্রলীগ করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ইতিহাসের সেরা সাহসী সন্তানেরাই ছাত্রলীগ করে। তিনি বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আর ছাত্রলীগ হচ্ছে সোনার মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান।

আমার রাজনীতির জন্ম হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। ছাত্রলীগ আমার শৈশবের ভালোবাসা, কৈশরের উচ্ছ্বাস এবং প্রথম যৌবনের প্রেম। ছাত্রলীগ আমার অহঙ্কার, আমার গৌরব, গর্ব এবং অলঙ্কার। আমার রাজনীতির ঐতিহ্য, ছাত্রলীগ আমার অস্তিত্বে মিছে আছে। আজকে অতীতের কথা মনে পড়লেই মন আনন্দের শিহরণ জাগে যে, স্কুলজীবনে এই সংগঠনের প্রেমে পড়েছিলাম। ‘আমরা সবাই মুজিব হবো, মুজিব হত্যার বদলা নিবো, এক মুজিব থেকে লক্ষ্য মুজিব জন্ম নিবে’- সেই গান দিয়ে স্কুল ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছিলাম।
ছাত্রলীগ মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন। সমাজের সকল স্তরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিচরণ রয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের নিজস্ব মেধা ও কর্মের মাধ্যমে আজকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত। আজকে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দৃঢ়তা, সততা নিষ্ঠা এবং সাহসীকতার সঙ্গে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রশংসা করছেন বিশ্ব নেতারা। সবাই জানতে চাইছেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিরাকলটা কী? কী চমক আছে জননেত্রীর নেতৃত্বে? শেখ হাসিনা ভালো থাকলেই বাংলাদেশ ভালো থাকবে। ভালো থাকবে ১৬ কোটি মানুষ-এই বিশ্বাস সমগ্র দেশবাসীর। ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দের কাছে আমার আহ্বান যার যার অবস্থান থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে সহযোগীতা করুন। তার হাতকে শক্তিশালী করুন। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ, আর কারো হাতেই নয়।

লেখকঃ রেজাউল করিম খোকন, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বারইয়ারহাট কলেজ শাখা, সাবেক সহ-সভাপতি মীরসরাই উপজেলা শাখা। সাধারণ সম্পাদক বারইয়ারহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগ।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*