প্রাণের ৭১

পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যার বর্ণনা দিল ব্যর্থ প্রেমিক

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দাদপুর গ্রামে তিন বন্ধু মিলে ধর্ষণ করে নববধূ কেয়াকে। পরে লাশ মাটিচাপা দেয় প্রেমিক মিলন ও তার সহযোগীরা। লাশ উদ্ধারের তিন মাস পর হত্যার এমন রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় নিহতের প্রেমিক ও অপর দুই ধর্ষক।

 

এ ঘটনায় হত্যাকারী তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতাররা হলেন- কালীগঞ্জের ত্রীলোচনপুর গ্রামের সলেমান হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (২৬), একই গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে ইসরাফিল (২৫) ও আজগর আলীর ছেলে আজিম (২৬)।

 

জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাদপুর গ্রামের একটি রাস্তার পাশ থেকে মাথার চুলসহ ক্লিপ ও একটি স্যান্ডেল পাওয়া যায়। যার সূত্র ধরে ওই গ্রামের মাঠের মধ্যে থেকে কলাগাছ ও গাছের পাতার নিচে মাটিতে পুঁতে রাখা গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশটি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রীলোচনপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে কেয়া খাতুনের বলে পরিচয় শনাক্ত করে নিহতের স্বজনরা। যিনি ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, লাশ উদ্ধারের পর হত্যার মোটিভ উদ্ধার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকারীদের কোনোপ্রকার আলামত না পেয়ে ক্লু-লেস এ মামলার তদন্তে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরে কেয়ার বিয়ের আগে ও পরে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করা হয়। এতে জানা যায়, কেয়ার সঙ্গে তিন বছর আগে থেকে একই গ্রামের সলেমানের ছেলে মিলন হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরিবার থেকে একই উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাইক্রোবাস চালক সাবজাল হোসেনের সঙ্গে কেয়ার বিয়ে দেয়া হয়।

 

কেয়ার বিয়ের পর মিলন হোসেন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে এমন সন্দেহে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর এলাকায় ছদ্দবেশে অভিযান শুরু করে পুলিশ। কয়েকদিনের অভিযানের একপর্যায়ে ১৬ মার্চ জীবননগরের হাসাদাহ এলাকা থেকে মিলনকে আটক করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশ্নবানের এক পর্যায়ে মিলন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং তার সঙ্গে ইসরাফিল ও আজিম জড়িত বলে জানায়।

 

 

 

মিলন গ্রেফতার হওয়ার পর আসামি ইসরাফিল ও আজিম গাঢাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরাফিলকে ২৭ মার্চ গ্রেফতার করলে সেও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

 

আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে দৃজনের বক্তব্য একই রকম হওয়ায় ইসরাফিল হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে আজিমও জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও তৃতীয় আসামি আজিমকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের চেষ্টায় গত মঙ্গলবার (০২ জুন) কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে আজিমকে গ্রেফতার করা হয়। সেও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

 

হত্যার দিনের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে ঘটনার দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে কেয়া খাতুনকে তার বাবার বাড়ি থেকে মিলন ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মিলন তাকে ধর্ষণ করে। পরে পালাক্রমে আজিম ও ইসরাফিল তাকে ধর্ষণ করে।

 

ধর্ষণের পর মিলন বাঁশের লাঠি দিয়ে কেয়ার মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে সেখানে পাশের বাড়ি থেকে একটি কোদাল এনে রাস্তার পাশে মাটি চাপা দিয়ে কলাগাছ ও কলাগাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যায়। প্রেমে ব্যর্থ হয়েই মিলন অন্য সহযোগীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*