প্রাণের ৭১

(ফেনী ১ আসন) আশংকিত,ভীত নই–আওয়ামীগ মনোনীত প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা শতভাগ।

গত বৃহস্পতিবার ফেনী ১ সংসদীয় আসন-ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম এর আমজাদ হাট ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের একযোগে, একমঞ্চে ওয়ার্ড যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমি এলাকায় থাকতে পারিনি, নিজের চোখে অবলোকন করা থেকে বঞ্চিত হলাম। লোকমূখে পরে’র দিন সম্মেলনের আড়ম্বরতা, জাঁকাজমক পূর্ণতা, জনসমাগমের বিবরণ শুনেছি। কেন জানি, যতই সম্মেলন সার্বিক সাফল্যের গর্বের কাহিনী শুনছিলাম, ততই ক্ষনে ক্ষনে আমার শরীর আচমকা কাঁপুনী দিয়ে উঠছিল। আমার কাঁপুনি কারন হয়ত অনেকের নিকট স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু আমি সহ আমার সেদিনের সহযোদ্ধা ভুক্তভূগীদের জন্যে মোটেও স্বাভাবিক নয়।তাই মনে হয় আমার কাছেও অস্বাভিকতার কাল ছায়া সারা অঙ্গে বারবার কাঁপুনি দিয়ে অমঙ্গল, অশুভের ঈঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিল।

বিবরণ অনুযায়ী আমার ধারনা হয়েছে–থানা বা জেলা যুবলীগের সম্মেলনও ইতিপুর্বে এত জাঁক জমক এবং যুব সমাজের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি, বিশেষ করে বিএনপি অধ্যুষিত এই অঞ্চলের কোথাও।

লোকজন যখন বলাবলি করছিল, তখন কেবলই আমার ৯৬–২০০১ ইং সালের ভয়াবহতার কথাই মনে পড়ছিল।ঐ সময়কালেও তদ্রুপ সারা অঞ্চলব্যাপী আওয়ামীলীগের জয়জয়কার দেখেছিলাম। যাদেরকে সেদিন জয়ধ্বনি’র অগ্রনী সৈনিক দেখেছিলাম, ঠিক তাঁরাই শেখ হাসিনার ক্ষমতা হস্তান্তরে’র পরক্ষনে আওয়ামী পরিবারে’র উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মামলা না থাকা সত্বেও রাস্তা, ঘাট, হাট, বাজার,বাড়ী বাড়ী তল্লাসি চালিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধরে ধরে ‘চ্যাং দোলা’ দিয়ে পুলিশের গাড়ীতে তুলে দিয়েছিল।
খালেদা জিয়া’র গাড়ী বহর অত্রালাকায় না এলেও, তাঁর গাড়ী বহরে বোমা হামলার বানোয়াট অভিযোগে আমাকে প্রধান আসামী করে উপজেলা ব্যাপী অসংখ্য ছাত্রলীগ,যুবলীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানীর পথ বেছে নিয়েছিল। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মীদের অজস্র মামলা ফাঁদে ফেলে তাঁদের সার্বিক জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিল। শুধু আমার ইউনিয়ন নয়, অঞ্চল ব্যাপী ২০০১-‘২০০৬ ইং সাল পয্যন্ত ৫টি বছর মুজিবাদর্শের কোন এক সাধারন কর্মী, একটি রাতের জন্যে ঘরে ঘুমাতে পারেনি।

পরবর্তিতে বোমাহামলার মামলা সহ আরো বেশ কয়েকটি মামলা “অস্ত্র ও বিস্ফোরক” আইনে ” জেলা দায়রা জর্জ আদালতের গঠিত “বিশেষ ট্রাইব্যুনাল” এ বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আল্লাহ’র অসিম কৃপায় সকল আসামী সকল মামলা থেকে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বেকসুর খালাস পেয়েছিলাম।

পরিতাপের বিষয়টি হচ্ছে, সেদিন গুলীতে আমার ইউনিয়নে যে পরিবারটি জননেতা জয়নাল হাজারীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে, আওয়ামীলীগে যোগদান করেছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরে’র পরক্ষনে’ সেই পরিবারে’র যোগদানকারীদের নেতৃত্বে ইউনিয়নব্যাপী তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। সুখের বিষয়টি হচ্ছে, সেই পরিবারটি এবার দলে পূণরায় যোগদান করার প্রয়োজন হয়নি। ২০০৮ সাল আসার আগেই আপনা আপনি ইউনিয়ন পরিষদ সহ আওয়ামীলীগের সর্বময় কতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

সেদিনের সম্মেলনে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক এম,পি সহ জেলা, উপজেলা’র অনেক স্বনামধন্য নেতাই উপস্থিত ছিলেন।তাঁরা অবশ্য নেতৃত্বের স্বভাব, সুলভ ভঙ্গিতে সম্মেলনের আড়ম্বরতা, জাঁকজমক আয়োজন, বিপুল জনসমাগমের উচ্ছ্বসিত প্রসংশা করেছেন।

আশাকরি ৯৬-২০০১ এর পরিবেশ, পরিস্থিতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা এই মহুর্তে দেখছিনা। কারন শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না, তাছাড়া জাতীয় ও আন্তজাতিক পরিস্থিতি পূর্বের মত নয়।সম্পুর্ণ আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনে, শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রনে। সুতারাং আবহমানকালের আওয়ামী বিদ্বেসী পরিবারে’র পূণঃ পাল্টি দেয়ার সুযোগ হয়তো বা হবেনা। আমার অযাচিত বক্তব্যের সত্যতা আওয়ামীলীগ ক্ষমতার বৃত্তে থাকাবস্থায় প্রমানীত হবেনা। তবে,একটি বিষয় প্রমানিত হবে,সম্মেলনে’র জাঁকজমকতা, জনসমাগম আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে, ভোটের অগ্রগতিতে প্রতিফলিত হয়েছে কি,হয়নি।

এবার অবশ্য বিএনপির শীর্ষনেত্রী খালেদা জিয়া ফৌজদারী মামলায় শাস্তি প্রাপ্তি’র কারনে, নির্বাচনে আসতে পারছেন না। নিঃসন্দেহে আওয়ামীলীগ প্রার্থী’র জন্যে এটা বড় একটি এসিভমেন্ট। আওয়ামীলীগের পক্ষে হেভিওয়েট নেতা’ই নির্বাচন করবেন, বিএনপি’র প্রার্থীও নিশ্চয়ই এলাকার তেমন একজনই হবেন।

আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পাল্লায় রয়েছে-১০ বছর একটানা জনসেবা করার নগদ অর্জন, সরকারের কোটিকোটি টাকার উন্নয়ন, সার্বক্ষনিক নেতাকর্মী, সাধারন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, সম্প্রীতি রক্ষা করে রাজনীতি, উন্নয়ন, জনসেবা করার অবাধ সুযোগ, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। অপরপক্ষে বিএনপি প্রার্থী’র উল্লেখিত অর্জন, এসিভমেন্ট, যোগাযোগ রক্ষা, ভোটার তোষন, কর্মি প্রতিপালন করার কিঞ্চিত পরিমাণ সুযোগ পায়নি।কারন অত্রাসনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কে নির্বাচন করবেন, তেমন কোন আলোচনা করার সুযোগ হয়নি।তাঁদের বদ্ধমূল ধারনা খালেদা জিয়ার নির্বাচনের আগে জেলমুক্তি ঘটবে এবং নির্বাচনে অংশ নিবে। তাছাড়া খালেদা জিয়া ব্যাতিরেকে এই আসনে নির্বাচন করার যোগ্যতা সম্পন্ন তেমন কোন নেতাও নেই। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় খালেদা জিয়ার নির্দিষ্ট আসনে মূলতঃ কোন আঞ্চলিক নেতার নামে উন্নয়ন করার কোন সুযোগ ছিলনা।

বিএনপি’র পক্ষে নির্বাচনে এমন কেউ আসতে পারেন, জীবনে কোনদিন তিনি রাজনীতি করেননি, নেতাকর্মী, ভোটার কেউ চিনেনা,জানেনা, নামও শুনেনি। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা নাও হতে পারেন।

সুতারাং নির্দিদ্বায় বলতে পারি-একাদশ সাধারত্ণ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা নয়। নিশ্চিত বিজয়ী হওয়ার সকল উপযোগীতাই আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে বলা যায়। জেলাব্যাপী একক নেতৃত্বের কারনে পিছনে চুরিকাঘাত করার সুযোগও দলীয় কোন নেতার নেই।সুতারাং আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বলা যায়। ৭৩ এর পর এবারই প্রথম এই আসন আওয়ামীলীগ দখলের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আশাকরি বিচক্ষন নেতৃবৃন্দ অবারীত সুযোগ হেলায় হাতছাড়া করবেন না।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*