প্রাণের ৭১

সারা বিশ্ব মুক্তি পাক, আমরা যেন মুক্তি পাই-প্রধানমন্ত্রী

মোহাম্মদ হাসানঃ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই বলে আজ পূর্বাহ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এমন মন্তব্য করেছেন।

আজ ১৮ জুন বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে নৌবহরে সংযোজিত নতুন করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’ এর উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তি চাই এটা যেমন সত্য, আবার যদি কেউ আমাদের ওপর হামলা করে তা যেন আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারি। তাই যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে রাখছি- আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন হয়। যাতে হামলা হলে যেন যথাযথভাবে তার মোকাবিলা করতে পারি।

সমুদ্র সীমা ও সম্পদ রক্ষায় শক্তিশালী নৌবাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমরা অনেক আধুনিক সরঞ্জাম কিনেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন দেশ সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে সেটাই আমাদের কামনা ছিল, কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যার পর সকল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন সরকারে আসি তখন উদ্যোগ ছিল কিভাবে আমাদের দেশে শুধু উন্নতি নয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বিভিন্ন বাহিনীগুলোকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলবো।

তিনি বলেন, আমরা যখন প্রথম সরকার গঠন করি এশিয়াতে তখন ব্যাপকভাবে মন্দা চলছে। ওই অবস্থায় নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ব্রিগেড বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’ ক্রয় করি, সেই সঙ্গে নৌবাহিনীকে আরও সুসংগঠিত ও সুজ্জিত করার উদ্যোগ নিই। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পর এ পর্যন্ত সরকারে আছি। জাতির পিতা প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছেন ১৯৭৪ সালে। সেই নীতিমালার ভিত্তিতে ফোর্সে গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ভিত্তিতে প্রত্যেকটা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যে নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। এভিয়েশন সিস্টেম যুক্ত হয়েছে অর্থাৎ এখন আমাদের নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। এই সমুদ্রসীমা নিয়েও একটা সমস্যা ছিল। যেটা জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন সমাধান করার, কিন্তু আমাদের ‍দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল, আমি ঠিক জানি না তারা বিষয়টা জানতেন কিনা? তারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি। পরে ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে এ ব্যাপারে সমস্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বেশকিছু কাজ করে যাই। দ্বিতীয় বার যখন সরকারে আসি তখন আরও উদ্যোগ নেই। সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার সেই অধিকারটা অর্জন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে দুই প্রতিবেশী দেশ একদিকে মিয়ানমার আরেকদিকে ভারত। এই দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমাদের সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, আমি প্রথম খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর হাতে দিয়ে দেই। পাশাপাশি ড্রাইডগ নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম, দু’টোই নৌবাহিনীকে দিয়েছি। আমরা নিজেদের দেশেও স্বল্প পরিসরে ধীরে ধীরে জাহাজ বানানো শুরু করেছি, মেরামতের কাজও করছি। পাশাপাশি বন্ধু প্রতিম দেশ যেখানে যেটা প্রয়োজন আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের নিজেদেরকেও শিখতে হবে, প্রস্তুত হতে হবে, প্রযুক্তি জানতে হবে। আমরাও যেন আগামীতে জাহাজগুলো নিজেরা তৈরি করতে পারি। আমরাই প্রয়োজনে জাহাজ এক্সপোর্ট করতে পারি, সেই চিন্তা মাথায় থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রসীমা রক্ষা করা, সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগনো এবং আমাদের অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে ব্যবহার করব সেগুলো আমাদের প্রয়োজন। আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তি চাই এটা যেমন সত্য আবার যদি কেউ আমাদের ওপর হামলা করে তা যেন যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। সে কারণে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী) প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন হয়। এই সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং ইতিমধ্যে অনেক আধুনিক সরঞ্জমাদি ক্রয় করেছি। যুদ্ধজাহাজ ক্রয় করেছি।

তিনি আরও বলেন, শুধু বাংলাদেশের না, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ কর্তৃক শান্তি মিশনেও যোগ দিচ্ছি। এ জাহাজাও শান্তি মিশনে যাবে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। জাতির পিতা শিখিয়েছেন আমরা সেই নীতি নিয়েই সকলে চলব, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার দরকার, সেখানে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে। সেই সহযোগিতা করে যাব। জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য। যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রাম বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নামটা ভালো হয়েছে, সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। কাজেই সংগ্রামের পথেই আমাদের থাকতে হয়। এখন আবার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী এক অদৃশ্য অশুভ শক্তি করোনাভাইরাস। এই অদৃশ্য শক্তির আক্রমণে সমস্ত বিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে, অর্থনীতি, যাতায়াতসহ সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ থেকে সবকিছুতে একটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে কেউ লড়াই করতে পারছে না। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব। সারা বিশ্ব মুক্তিপাক আমরাও যেন মুক্তি পাই।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*