প্রাণের ৭১

অস্ত্রের আদলে তৈরি হচ্ছে শিশুদের কলম।

পণ্যগুলো দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো, তবে আগ্নেয়াস্ত্র নয়— এগুলো শিশুদের জন্য তৈরি করা কলম। আগ্নেয়াস্ত্রের অনুকরণে তৈরি কলম এখন বাজারে ভরা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে এমনকি ফুটপাতেও শিশুদের খেলনার দোকানে এমন কলমসহ অন্যান্য অস্ত্রের আদলে তৈরি খেলনা চোখে পড়ে। এগুলো ব্যবহার করছে কোমলমতি শিশুরা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্রের মতো কোনোকিছু শিশুদের ব্যবহার না করতে দেওয়াই ভালো। এসব তাদের মনোজগতের বিকাশে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। আগ্নেয়াস্ত্রের আদলে তৈরি শিক্ষা উপকরণগুলো অভিযানের মাধ্যমে বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।
A
গত বৃহস্পতিবার (৭ জুন) ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনের ফুটপাতে অনেকগুলো পণ্য সাজিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। হঠাৎ চোখ পড়লো বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের আদলে তৈরি কলমে। সেসব কলম কিনছে স্কুল পোশাক পরা দুই ছাত্র।
A
এগুলো কী জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. শাহিন সাহেব বলেন, ‘এগুলো কলম। দাম ২০ টাকা। এগুলো চকবাজার থেকে পাইকারিতে কেনা।’
A
দরদাম করে কয়েকটি কলম কিনলেন ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি প্রানের৭১ কে বলেন, ‘এই খেলনাগুলো দেখে খুব পছন্দ হয়েছে। তাই কিনলাম। আমরা দুজনেই (স্বামী-স্ত্রী) টিউশনি করি। যাদের পড়াই তাদের দেবো। এগুলো পেলে তারা খুব খুশি হবে।’
A
নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে খেলনার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের খেলনা আগ্নেয়াস্ত্রের দেখা মেলে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নামিদামী ব্র্যান্ডের খেলনাও।
A
নিউমার্কেট এলাকার শিশুদের খেলনা বিক্রেতা মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আগে তো খেলনা ছিল। এখন তো বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে খেলনা বানানো হয়। তাই শিশুদের জন্য। সব ধরনের খেলনা বানানো সহজ হয়ে গেছে।’
A
শিশুর জন্য খেলনা পিস্তল, ছুরি, চাকু— এগুলো বেচা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী যে বলেন! কী ঠিক, কী বেঠিক— এসব চিন্তা করলে কি ব্যবসা করা যাবে? আমরা দোকানে জিনিস রাখি, কারো পছন্দ হলে কিনবে, না হলে কিনবে না।’
A
রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী নূরজাহান বেগম প্রানের৭১ কে বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের ডিজাইনের কলম ভালোই লাগে। শিশুরা এগুলো দেখে খুশি হয়।’
A
রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানা সিদ্দিকী ন্যান্সি প্রানের৭১ কে বলেন, ‘আমরা তো স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্কেল আনতেও নিষেধ করি। কারণ, এটা দিয়ে কোনও কোনও শিশু মারামারি করে। আমার মতে, পিস্তল, ছুরি, চাকু— এই ধরনের কোনোকিছু শিশুদের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে রাখা উচিত নয়।’
A
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহসান শুরুতেই একটি গল্প শোনান, ‘একবার যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের স্কুলে হাতির ছবি আঁকতে বলা হয়েছে। ওরা ছবি এঁকে হাতির পিঠে দুটো ডানা এঁকে দিয়েছিল। কারণ ওরা রূপকথার গল্পগুলোতে দেখে যে হাতির পিঠে পাখা আছে। অর্থাৎ শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, যা তাকে দেখানো-শেখানো হবে, তাই সে শিখবে।’ তিনি বলেন, ‘পিস্তলের মধ্যে যদি কলম দেওয়া হয় সেটাতো অবশ্যই ভয়াবহ হবে। সেক্ষেত্রে শিশুদের ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত করবে। শিশুরা যখন টিভিতে মাসলম্যানকে দেখে তারা আনন্দ পায়। সেখানে যদি তাকে পিস্তল ধরিয়ে দিই ডেফিনেটলি সেটা একটা কুপ্রভাব ফেলবে ওদের মনোজগতে। তখন সে পিস্তল আর কলমের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝবে না। তার মধ্যে সহিংসতার মনোভাব তৈরি হবে।’
A
তানভীর আহসান বলেন, ‘এই ধরনের অস্ত্র যখনই শিশুর হাতে খেলনার ফরম্যাটে দিই সেটা যেমন ভয়াবহ হবে, সেটা আরও ভয়াবহ হবে যদি শিক্ষার উপকরণের মধ্যে দেওয়া হয়।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*