প্রাণের ৭১

ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট চুক্তিতে ইইউর অনুমোদন

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে দর-কষাকষির পর অবশেষে ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট চুক্তিতে অনুমোদন দিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। গতকাল রবিবার ব্রাসেলসে ইউনিয়নের ২৭ নেতা চুক্তিতে তাঁদের সম্মতি জানান। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে—ব্রেক্সিট চুক্তি মূলত এরই একটি রূপরেখা।

চুক্তির প্রশংসা করে ইইউ নেতারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া গোছানোভাবে শেষ করা যাবে। চুক্তিটি বাস্তবায়নের আগে অবশ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন লাগবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট মনে করেন, পার্লামেন্টে এমপিদের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট চুক্তি একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি যুক্তরাজ্যের জন্য মোটেও আনন্দের নয়। আজ কারো হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস থাকা উচিত নয়।’

আগামী ২৯ মার্চ থেকে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ইইউ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে—সে বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে গত বছরের মার্চ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি চলছিল। গতকাল ব্রাসেলসে এর ‘সাময়িক’ সমাপ্তি ঘটে। এক ঘণ্টারও কম সময় আলোচনা করার পর চুক্তিতে সমর্থন দেন ইইউভুক্ত দেশগুলোর ২৭ নেতা।

অনুমোদন দেওয়ার পর ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাংকার বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের এমপিরা যদি এখন মনে করেন যে তাঁরা চুক্তির বিপক্ষে দাঁড়ালে ইইউ কিছু বিষয়ে ছাড় দেবে, তাহলে সেটি হবে হতাশাজনক একটি ব্যাপার।’

অবশ্য ভবিষ্যৎ নিয়ে আগাম মন্তব্য করতে রাজি নন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। এক টুইটার বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে কেমন পরিস্থিত তৈরি হবে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমি ভবিষ্যৎ প্রবক্তা নই।’

আগামী মাসের শুরুতেই ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ওঠার কথা রয়েছে। তবে এটি অনুমোদন পাবেই, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। লেবার পার্টি, লিব ডেমস, এসএনপি ও ডিইউপিসহ অনেক রক্ষণশীল দলের এমপিরা চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রাইবস্কেট মনে করেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হলে সম্ভাব্য নানা কিছুই ঘটতে পারে। দুপক্ষের দর-কষাকষির মেয়াদ বাড়া থেকে শুরু করে আরেকটি গণভোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অনুরোধ জানিয়েছেন ব্রেক্সিটবিষয়ক গণভোটের ফলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। মের মতে, তিনি সামর্থ্যের সেরা চুক্তিটিই করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পার্লামেন্টে ওঠার আগ পর্যন্ত টেরেসা মে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চুক্তির পক্ষে এমপিদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন।

চুক্তির বিরোধিতাকারী ব্রিটিশ এমপিরা বলছেন, চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। কারণ চুক্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।

চুক্তিতে এমন একটি নীতিমালা রয়েছে, যার অধীনে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় পণ্যবাণিজ্যের অনুমোদন রয়েছে। মূলত দুপক্ষের সীমান্ত এলাকার বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করতেই এই নীতিমালা করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য পরোক্ষভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মনীতি মানতে বাধ্য হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যচুক্তিতেও বিষয়টি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের জন্য ইউরোপিয়ান কাউন্সিলেও তোলা হবে। সেখানে ২৭ দেশের মধ্যে অন্তত ২০টি দেশের সমর্থন লাগবে। এরপর চুক্তিটি ভোটাভুটির জন্য তোলা হবে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে। আগামী বছরের শুরুতে সেখানে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। ‘নাটক’ যা হওয়ার, তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টেই হবে। সূত্র : বিবিসি।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*