প্রাণের ৭১

আজ অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

মোহাম্মদ হাসানঃ ‘আমি বাংলায় কথা কই, আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই…’। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের দিন আজ। আজ অমর একুশে। জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশের প্রথম প্রহরে সরাসরি পুস্পস্তবক করতে পারেননি। তবে তাদের পক্ষে ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবরা।

দিবসটি সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

চেতনার পথে দ্বিধাহীন অভিযাত্রী বেশে বাঙালিকে চলার প্রেরণা জোগায় একুশ। ৫২’র সেই সোনাঝরা রোদ্দুরে রক্তস্নাত মোদের গরব মোদের আশাকে যথাযথ প্রকাশে একুশ আমাদের শাণিত চেতনা। একুশ আমাদের বাঁচতে শেখায়, লড়াই করে অধিকার আদায় করতে শেখায়। একুশ বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকার। ভাষা সংগ্রামের রক্ত স্নাত এই ইতিহাস শুধু বাঙালির মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করাই নয়, বাঙালির স্বাধিকার, স্বাধীনতা, সব ধরনের বৈষম্য দূর করার সংগ্রাম ও অনুপ্রেরণার উৎস। বাঙালির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা যা কিছু মহান, সবকিছুতেই একুশের চেতনা বিদ্যমান। মায়ের ভাষার মান বাঁচাতে প্রাণ দিয়েছিল সে দিন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকেই। সময়ের সেই সাহসী সন্তানদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর দিন আজ। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আত্মোৎসর্গের নজির সৃষ্টি করে বাংলাদেশের মানুষ।

মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিউরসহ বীর সন্তানেরা। এ অমর বীরগাথা আজ কেবল এ ভূখণ্ডের সীমানায় আবদ্ধ নেই, বাঙালির আত্মত্যাগ স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত। এ গৌরব বাঙালির, বাংলাদেশের। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীজ বপন হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। একুশের আত্মত্যাগের মাধ্যমে উন্মেষ ঘটে বাঙালি জাতীয়তাবাদের। সেই জাতীয়তাবাদী চেতনার পথ ধরে ১৯৭১-এর গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এখনো জাতির প্রতিটি সংকট মুহূর্তের অনুপ্রেরণা একুশের চেতনা। আজও অমর একুশে অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অন্তর্নিহিত শক্তি আর অদম্য সাহস হয়ে আছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*