প্রাণের ৭১

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুঁচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’- সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি করে তুলতেই আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ।

 

 

শনিবার বছরের শেষ দিনের রক্তিম সূর্যগ অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে গেছে বাংলা বছর ১৪২৫। রোববার ভোরের সূর্য স্বাগত জানাবে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬’কে। নতুন বছরের প্রথম দিনটি চিরায়ত আনন্দ-উদ্দীপনা আর বর্ণাঢ্য উৎসবের মধ্য দিয়ে হাজির হবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

বছরের এ প্রথম দিনে গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার বিহ্বলতা। ঢাকায় রমনার বটমূল থেকে উৎসবের শুরু হয়ে শাহবাগে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পাড়ায়-মহল্লায়, বাসা-বাড়িতে, পার্কে-রাস্তায় সবখানে শোনা যাবে একই সুর; সবার গলায় একই আহবান- ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’

আমাদের দেশের মূল স্তম্ভ কৃষক সমাজ আজও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে। ফসল রোপণ ও ঘরে তোলার পালাও চলে সেই পঞ্জিকা অনুসারে। ফসলি সাল গণনার জন্য এক সময় যে বাংলা সনের উৎপত্তি তা সুদীর্ঘকাল ধরে শহর-বন্দর, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এদেশের মানুষের হৃদয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি হিসেবে শক্ত আসন গেড়ে বসেছে।

১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা একসঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠবেন ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’

আয়োজকরা জানান, এবারও ছায়ানটের শিল্পীরা পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানাবেন।ছায়ানটের এবারের ভাবনা- ‘সম্প্রীতি ও স্বদেশ’। এখানে গান গাইবেন অতিথি শিল্পী ও ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিল্পীরা।

পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সালে (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ) প্রতিবাদের অনন্য ভাষা হিসেবে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু করে ছায়ানট। ১৯৭১ সালে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই সুরের মূর্ছনা আর কথামালায় রমনা বটমূলে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে ছায়ানট।

বাঙালির বর্ষবরণের আরেকটি প্রধান কর্মযজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে নানা প্রতীক, চিত্র আর মুখোশের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করা হয়; প্রার্থনা করা হয় সত্য, সুন্দর এবং মঙ্গলের জন্য।

মূলত এই আয়োজনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় রাজধানীর বৈশাখ বরণের কার্যক্রম। আর তাই এ উৎসবকে সফল করতে গত এক মাস নিরলস পরিশ্রম করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী। শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে পাখি, বাঘ, বক, ঘোড়া, উল্টা কলসি, পেঁচা, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতির শিল্পকর্ম।

রমনার বটমূলের মঞ্চ ঘিরে র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। রয়েছে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও পুলিশের বিশেষ বোমা ডিস্পোজাল টিম। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম।

এছাড়া বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বিসিক নববর্ষ মেলা, আলোচনাসভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*