প্রাণের ৭১

বিরতির দ্বিতীয় দিনেও সিরিয়ায় মৃত্যুমিছিল

দ্বিতীয় দিনে পড়ল সিরিয়ার যুদ্ধবিরতি। সকাল ন’টা থেকে রাত দু’টো— মাত্র পাঁচ ঘণ্টার সামরিক বিরতির সময়কাল বেঁধে দিয়েছে বাশার-আল আসাদের ‘বন্ধু’ দেশ রাশিয়া। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এতটুকুও। বুধবারও চলেছে গোলাগুলি। এখনও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আটকে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি এতটুকু সাহায্যও। বুধবারও দামাস্কাসের কাছে পূর্ব গুটা এলাকায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে বিদ্রোহীদের উপর বোমাবর্ষণ করেছে যৌথবাহিনী।

রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব অনুযায়ী স্থির হয়েছিল এক মাসের জন্য যুদ্ধবিরতি হবে। তবে মস্কো জানায়, যত দিন না সব পক্ষ চুক্তি মানতে
রাজি হচ্ছে, তত দিন যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। সেই সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীগোষ্ঠীও।। তবে তার পরোয়া না করে গত কালও পূর্ব গুটায় বোমা ফেলেছে বাহিনী। মৃত্যুর খবর মিলেছে ৭ জনের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এখনও ওই সব এলাকায় আটকা পড়ে রয়েছেন ৪ লক্ষ সাধারণ নাগরিক। খাবার নেই, জল নেই, শীতবস্ত্র নেই, মাটির নীচে মাথা গুঁজে দিন কাটছে। মাথা তুললেই ধেয়ে আসছে গুলি, বোমা। মাথার ওপর চক্কর কাটছে বোমারু বিমান।

মানব করিডর বানিয়ে আটকে পড়া বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে আল ওয়াফিদিন চেকপয়েন্টের কাছে ইতিমধ্যেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেখানে দেখা মেলেনি কোনও নাগরিকের। ২০১৬ সালে আলেপ্পোতে বিদ্রোহী দমনের সময়ে এমনই মানব করিডরকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিল রাশিয়া-সিরিয়া বাহিনী। অনেকেই মনে করছেন, এ ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনা থাকতে পারে। সিরিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সানা-তেও দাবি করা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টাই আসলে করছে যৌথ বাহিনী

তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অভিযোগ, এ দিনও পূর্ব গুটা থেকে মানব করিডরের উপরে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। সরকারি বাহিনীকে নিশানা করে ছোড়া হয়েছে শেল। বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি রাশিয়ার। সে প্রসঙ্গেই এ দিনই রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভ্রভ জানান, যুদ্ধ থামাতে এই মুহূর্তে বিদ্রোহীদের সহযোগীতাই সব চেয়ে প্রয়োজন।

দৌমার এক বাসিন্দা বছর পঁচিশের সামির আল-বুয়াইধানির কথায়, ‘‘রাশিয়ার এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিদিনই আমাদের মারছে আর বোমা ফেলছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ওই মানব করিডরের মাধ্যমে নিরাপত্তা খোঁজা আসলে রাশিয়ার পাতা ফাঁদে পা দেওয়া। পরিবারকে নিয়ে সেই পথে যাওয়া নিরাপদ নয় বলেই মনে করেন তিনি।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হিংসার গতি কমলেও এখনও জারি মৃত্যুমিছিল। মঙ্গলবারও সিরীয় সেনার বোমায় দু’টি শিশু-সহ সাত নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর দু’টোর পর থেকেই এ দিন ফের বোমা ফেলা শুরু করে যৌথবাহিনী। ফেব্রুয়ারি জুড়ে যুদ্ধে অন্তত ৫৮২ জন সিরীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকই শিশু। গত কালও ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচ শিশু-সহ ১৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে।

একই অবস্থা হামমুরিয়েহ শহরেরও। সেখানকার নাগরিক মহমম্দ আবদুল্লার কথায়, ‘‘়এই যুদ্ধবিরতি বাসিন্দাদের কাছে মাত্র দু’টো পথই খোলা রেখেছে। হয় পালাও নয় মরো।’’ কেবল আবদুল্লাই নয়, গোটা সিরিয়াবাসীই এখন চায় শুধু যুদ্ধ থামুক। একই সুর গুটার এক বিদ্রোহী দলের সদস্যের গলাতেও। রাষ্ট্রপুঞ্জকে একটি চিঠি লিখে তিনি তা জানিয়েওছেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*