প্রাণের ৭১

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড

রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি, সন্দিগ্ধ তানভীরের আবেদন হাইকোর্টের কার্যতালিকা থেকে বাদ

►তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ ►এভাবে রিপোর্ট প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল- রাষ্ট্রপক্ষ ►সাংবাদিকদের কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না- হাইকোর্ট

নিজের ক্ষেত্রে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে তানভীর রহমানের করা এক আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের বিচারিক ক্ষমতা থাকার পরও এখতিয়ার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রশ্ন তোলায় আদালত তানভীর রহমানের আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। তানভীরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
আদালত আদেশে বলেন, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এ আদালতের এক আদেশে মামলার তদন্তের অগ্রগতি ও মামলায় সন্দিগ্ধ তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এ আদেশ অনুসারে তদন্ত কর্মকর্তা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার শুনানির শুরুতেই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তবে আমরা আমাদের এখতিয়ার সম্পর্কে অবহিত। এই আদালতকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, ‘এই গঠনবিধির অব্যবহতির পূর্বের গঠনবিধির কোনো আংশিক বা রায় প্রদানের জন্য থাকিলে তাহাও গ্রহণ করিবেন’। যেহেতু রুলটি চলমান, তাই এ মামলার শুনানি ও আদেশ প্রদানে এখতিয়ারগত বাধা নেই। তথাপি রাষ্ট্রপক্ষ প্রশ্ন উত্থাপন করায় মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো।

এদিকে মামলায় র‍্যাবের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, এ রিপোর্ট মিডিয়ায় কিভাবে গেল? এটা দুঃখজনক। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে এ রিপোর্ট ছুটেছে। একেক মিডিয়ায় একেক ধরনের লেখা আসে। কোর্টে উপস্থাপনের আগেই এভাবে মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ পেলে জনমনে এক ধরনের পারসেপশন তৈরি হয়।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, আমি সাংবাদিক ছিলাম। আমি কাউকে কোনো রিপোর্ট দেইনি। এ কারণে সাংবাদিক বন্ধুরা আমাকে দেখতে পারেন না।
আদালত বলেন, সাংবাদিকদের কাজই হলো খবরের পেছনে ছোটা। তারা খবর সংগ্রহ করতে ছুটবেই। আমরাতো সাংবাদিকদের কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।

এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতে উপস্থাপনের আগেই এভাবে রিপোর্ট প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল।

আদালত বলেন, সাংবাদিকরা রিপোর্ট পেলেই ছাপাবে। এটাই স্বাভাবিক। যদি ওই রিপোর্টের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের মিল না থাকে তাহলেই কেবল তাদের (সাংবাদিক) দোষারোপ করা বা ধরার সুযোগ থাকে।
আদালত বলেন, রিপোর্ট আদালতে দাখিলের আগেই যে সাংবাদিকদের হাতে গেছে, তার দোষতো কাউকে না কাউকে স্বীকার করতেই হবে।

গতকাল সকালে র‍্যাবের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের পর পরই আদালত গণমাধ্যম নিয়ে মত প্রকাশ করেন। এরপর এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করার শুরুতেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মামলা বাতিলের জন্য তানভীরের আবেদনটি যখন করা হয় তখন এই হাইকোর্ট বেঞ্চের ফৌজদারি মামলা শুনানির এখতিয়ার ছিল। এই আদালতের ফৌজদারি মামলা শুনানির এখতিয়ার নেই। এই আদালতের রিট জুরিডিকশন। তাই এ বিষয়ে (তানভীরের আবেদন) এখন আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।

এসময় তানভীরের আইনজীবী কার্যতালিকা থেকে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, এর আগে এই আদালতের ফৌজদারি মামলায় শুনানির এখতিয়ার ছিল। তখন এই মামলায় আদালত রুল জারি করেছিলেন। কার্যতালিকায় যে এখতিয়ারের কথা বলা আছে তাতে এই মামলা শুনানির এখতিয়ার রয়েছে এ আদালতের। তাই মামলাটি শুনতে বাধা নেই।

এ পর্যায়ে আদালত তানভীরের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেন। আদেশের পর পরই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, আদালত বিষয়টি শুনতে পারেন। অনুমতি দিলে শুনানি শুরু করতে পারি। আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিয়েছি।

এরপর তানভীরের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, আপনারা শুনতে পারবেন কি পারবেন না সে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাতে পারেন। প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর অনুরোধ করছি।

এসময় আদালত বলেন, আমাদের এখতিয়ার থাকার পরও রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুলেছে। তারা যেহেতু শুনানি করতে রাজি নয় তাই আমরা তো আর জোর করে শুনতে পারি না। এ কারণেই কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো।

এসময় ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, পুরো মামলাটি বাধাগ্রস্থ করতেই রাষ্ট্রপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছে। এরপর আদালত আর কোনো মন্তব্য করেননি। এ অবস্থায় ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

নিজের ক্ষেত্রে মামলা বাতিল চেয়ে তানভীর রহমানের করা এক আবেদনের ওপর শুনানিকালে হাইকোর্ট গতবছর ১৪ নভেম্বর এক আদেশে আগামী ৪ মার্চের মধ্যে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে এই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক মো. তানভীর রহমানের সম্পৃকতার বিষয়েও প্রতিবে

কালেরকন্ঠ






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*