প্রাণের ৭১

এম এ কাসেমঃ আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ গর্বিত নেতা

প্রবাসে আওয়ামী লীগ যেসব কীর্তিমান কর্মীকে নিয়ে গর্ব করতে পারে, এম এ কাসেম তাদের অন্যতম একজন। ইউরোপে জয়বাংলার ফেরিওয়ালা হিসেবে এম নামে যাকে চিনে জানে তিনি হলেন ফ্রান্সের নোয়াখালীর কাসেম। লোকে বলে ‘জয়বাংলার পাগল’। পুরো জীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ বলে কাটিয়ে দেয়া এক কর্মী। মানুষটার চিন্তায়, চেতনায় এতোটাই বঙ্গবন্ধু জুড়ে আছেন যে কোন সমাগমে একটু সুযোগ পেলে বঙ্গবন্ধু নিয়ে দু/চার কথা বলবেই।

এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সামাজিক রাজনৈতিক উন্নয়ন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সব্যসাচী ঘরানার এ কর্মবীর মানুষটি জীবনের প্রথম দিক থেকেই রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহন ছিল তার রুটিনমাফিক কাজ। নোয়াখালীর চৌমুহনী শহর ছাত্রলীগের কর্মী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী ছাত্রনেতা। বর্তমান ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সন্ত্রাস বিরোধী মনোভাব ও মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন এ ছাত্রনেতা ছাত্র রাজনীতিতে ছিলেন রোল মডেল। ১৯৫৪ এর ১২ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার হাজিপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেন এম এ কাসেম। চৌমুহনী মদন মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও চৌমুহনী এস. এ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে, তখন নোয়াখালী সদরে যেই কয়জন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাদের একজন এম এ কাসেম। ১৯৭৩ সালে নোয়াখালী চৌমুহনী শহর ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও নোয়াখালীর আওয়ামী রাজনীতির প্রাণপুরুষ নুরুল হকের জ্যেষ্ঠা কন্যা ও ডি জি এফ আইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল আকবর হোসেনের মা মোসাম্মৎ রহিমা খানম মনির নেতৃত্বে সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রদের কে সংগঠিত করেন। গঠন করেন নব-উম্মেষ ক্লাব। চৌমুহনী নব-উম্মেষ ক্লাবের মাধ্যমে তারা ১৫ আগষ্ট নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে কাজ করেন। সে সময় মোছাম্মৎ রহিমা খানম মনি নব-উন্মেষ ক্লাবের সভাপতি ও এম এ কাসেম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আশির দশকের দিকে উচ্চ শিক্ষার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রলীগ কে সংগঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী রাজনীতির প্রতিকুলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবিরের দুর্গ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন তিনি। ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের প্যানেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এ জি এস পদপ্রার্থী হওয়ার পর থেকে জামায়াত শিবিরের রোষানলের শিকার হন তিনি। জামায়াত শিবির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রাণনাশের হুমকি ও মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশান্তরী হন। ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে ফ্রান্সে চলে যান। কথায় আছে, যার ভেতর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লুকায়িত সে কখনো ঘরে বসে থাকতে পারেনা। সুদূর প্রবাসেও তিনি বসে থাকেননি, সেবছরই ফ্রান্সে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের সংগঠিত করার কাজে হাত দেন। ব্যাপক সাড়া মেলে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে গঠন করেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি। সে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হন তিনি। পরবর্তীতে সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে থেকে বেশ কয়েকবার সংগঠনের প্রয়োজনে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। ১৯৯২ সালে আ্যডভোকেট জান্নাত রেহেনা মনির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কাসেম-মনি জুটিকে আর্শিবাদ করেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেত্রীর সেই আর্শিবাদ আমার চলার পথে পাথেয়। এই দেশবৃক্ষের ছায়াতলে আমরণ নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।

২০১৮ সালে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করতে দিন রাত পরিশ্রম করেন। কোথায় নেই তিনি, সকল ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রমে তার উপস্থিতি শতভাগ। ইউরোপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান আওয়ামী লীগ কর্মীদের শক্তিশালী ও উজ্জীবিত করতে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপের যেদেশেই আসুক না কেনো তার উপস্হিতি সবার অগ্রভাগে। তিনি একজন অনলবর্ষী বক্তা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা তার মুখ থেকে শুনতে কর্মীরা মন্ত্রমুগ্ধের মত মুখিয়ে থাকে। সদালাপী, শিক্ষিত, সজ্জন, একজন সাবেক ছাত্রনেতা, মেধাবী ও আধুনিক চিন্তা চেতনার রাজনীতিবিদ হিসাবে তার কোন জুড়ি নেই। এম এ কাসেম তার রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে বলেন- স্মার্ট বাংলাদেশ ও উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার জীবনের আদর্শ, আওয়ামী লীগ আমার ঠিকানা, শেখ হাসিনা আমার রাজনৈতিক পথ প্রদর্শক এবং নৌকা আমার প্রতীক। এটাই আমার রাজনৈতিক জীবনের শিকড়। বর্তমানে তিনি দেশেই বেশী থাকেন। তার শেষ ইচ্ছা বাকী জীবন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জনগণের সাথে কাটাবেন। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সহকর্মী আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে জনসংযোগ চালাতে দুই দিনের জন্য সিলেট সফর করেন। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে পরিচিত ‘হাইব্রিডদের’ ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছেন উপেক্ষিত ‘ত্যাগী ও যোগ্য’ নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলটির হাইকমাণ্ডের নির্দেশনার পরেও মূল্যায়ন হচ্ছেন না তারা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সংগঠনটিতে ভিড় করছেন নানা দিক থেকে ছুটে আসা ক্ষমতালোভীরা-যারা পরিচিতি পেয়েছেন অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড হিসেবে। অভিযোগ উঠেছে, এখন ‘তারাই’ দলটির কেন্দ্রের উপ-কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। অনুপ্রবেশকারী এসব হাইব্রিডদের রসানলেও পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের। দলের দুঃসময়ে যারা এগিয়ে আসেন তাদের কেন মূল্যায়ন হয় না-এখন এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর আত্মত্যাগের জন্যই দলটির কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগে অনেক ত্যাগী নেতা ছিলেন বলেই বারবার আঘাত করেও কেউ এ দলকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি।দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতন্ত্র ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য দলের সব ত্যাগী নেতার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ ব্যাপারে দলের সভাপতির একটি সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তিনি ত্যাগীদের মূল্যায়নের বিষয়ে বার বার বলেছেন। তারপরও ত্যাগীদের মূল্যায়ন হয় না। এর কারণ কি? তাহলে কি হাইকমাণ্ডের নিদের্শনা উপেক্ষা করা হয়? আসলে সবাই দায়িত্ব পেলেই ত্যাগীদের মূল্যায়নের বিষয়টা ভুলে যান। তার চারপাশে থাকা আপনজনদেরই দায়িত্ব দেন। ত্যাগীরাও মান-অভিমানে অনেক সময় দূরে থাকেন। এম এ কাসেম ফ্রান্স আওয়ামী লীগের দু:সময়ে অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী যোগ্যতা দিয়ে। অগণিত কর্মী সৃষ্টি করা এই নেতাকে সবাই সমানে ভালোবাসেন। কারণটাও সহজভাবে বুঝা যায়, তিনি একজন তৃণমূল কর্মীবান্ধব সৎ, পরোপকারী ভালোমনের মানুষ। সংগঠনের প্রতি এই নির্লোভ ব্যক্তির কীর্তি, কর্মীদের প্রতি অপার সহমর্মিতা ও ভালবাসা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাক অনেক দুর। সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, বর্ষিয়ান এই নেতাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গুরুত্বপূর্ণ কোন দায়িত্ব দিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। রাজনীতিতে এমন নির্লোভ ব্যক্তির বড় প্রয়োজন।

 

লেখক: সেলিম উদ্দিন, তরুণ সংগঠক।

 

onesalim@gmail.com






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*