প্রাণের ৭১

নিজেকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা সবসময় করা উচিত -মোহাম্মদ হাসান

বিশ্বায়নের যুগে যেমন আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি। তেমনি নানমুখী সমস্যাও আমদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধানও করতে সক্ষম হই। তবে সমাধানের আগেই অনেক কিছু হারাতে হয়। তারপরও আমরা সম্ভাবনার বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব কিছু জয় করবোই। এর আগে আমরা ডেঙ্গু ভাইরাস মোকাবেলা করেছি। অনেকটা সফলও হয়েছি। এবার করোনা ভাইরাস থেকেও আমরা সতর্ক থেকে মোকাবেলা করবো। এজন্য প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের সবার সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে কোনভাবেই আতংক ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা সঠিক হবে না।
সারাবিশ্বের মানবসভ্যতার চাকা থমকে গেছে ছোট্ট এক অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে। বিশ্বের সর্বোন্নত সব দেশ ও জাতি নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষার স্বার্থে গৃহবন্দী করে ফেলছে। এই ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশেও এখন আতংকের শেষ নেই। অনেকে অহেতুক অতিরিক্ত আতংকিত হয়ে নানাবিধ আত্মঘাতী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। অনর্থক অতিরিক্ত পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটের সৃষ্টি করছে।
মূলত: বিষয়টি হচ্ছে “করোনা” একটি সংক্রমক ব্যাধি, যদি আপনি রোগীর শরীর হতে নিঃসৃত তরল বা ড্রপলেট এর সংস্পর্শে আসেন। কিন্তু জেনে রাখবেন এটি মারাত্মক প্রানঘাতী অসুখ নয়। সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর এর মতোই এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হয়।মূলত বয়স্ক ব্যক্তি, অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা (যেমন- ক্যান্সার আক্রান্ত, হৃদরোগে আক্রান্ত, এইডস এ আক্রান্ত, শ্বাসকষ্ট ও যক্ষায় আক্রান্ত) সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ। উপরের বর্ণিত ব্যক্তিগণ যদি আক্রান্ত হয় তবে জীবনহানির ঝুঁকি সবচাইতে বেশী। সারাবিশ্বে মৃত ব্যক্তির বেশীরভাগই পঞ্চাশ উর্ধ্ব বয়সের। আমাদের দেশে ইতিমধ্যে যে কয়জন মারা গেছে তারাও প্রবীণ ব্যক্তি।সবচেয়ে আশার আলোর কথা আমাদের দেশের লোকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত দেশের লোকদের চাইতে বেশী। আমরা প্রতিদিন খাবারে যে পেঁয়াজ, হলুদ, তেজপাতা, কাঁচামরিচ, আদা, লবঙ্গ, কালোজিরা খাই এবং প্রচুর শাকসবজি খাই এই কারণে আমাদের দেশের মানুষের দেহে ভাইরাসবিরোধী ক্ষমতা অনেক বেশী। আতংক নয়, আত্মবিশ্বাসী হোন। মানসিকভাবে শক্ত হোন, মনের দৃঢ়তাও আপনার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। আমাদেরকে মনে করতে হবে এটা একটা সাধারণ জ্বর-কাশি-সর্দি রোগ। শুধুমাত্র এই রোগ হলে আমদেরকে পৃথকভাবে বা আইসোলেশনে থাকতে হবে যাতে এটি ব্যাপকভাবে না ছড়ায়। এই ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক দিক হলো এটি শ্বাসকষ্ট ঘটায়। শ্বাসতন্ত্রে যাদের জটিলতা তারাই মারা যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, করোনা ভাইরাসকে নয়, করোনা ভাইরাস যিনি সৃষ্টি করছেন বা যিনি মুক্ত করবেন সেই মহান শক্তিধর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর কাছে দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। করোনার আতংকে আতংকিত না হয়ে বেশী ধর্ম-কর্ম করুন ও আল্লাহকে স্মরণ করুন। সবাই স্ব স্ব ধর্ম অনুসরণ করে স্রষ্টার দয়ায় নিজেকে সিক্ত করুন। ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আকাশে আসীন প্রভুর দয়া ছাড়া জমিনের মানুষের কিছুই করার নেই।
আমাদের দেশে সহজলভ্য সজনে ডাটা, পাট শাক, টমেটো, লাউ, পেঁপে, কাঁচা হলুদ, কালোজিরা, মধু, লেবুর শরবত বেশী বেশী পান করে শরীরকে ভাইরাসের আক্রমন থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। প্রতিদিন করোনার মতো অসংখ্য ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে, আর আমাদের শরীরের এন্টিবডি সেই ভাইরাসগুলোকে মেরে শরীরকে সুস্থ রাখছে। আমরা যদি সঠিক পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাই তবে এই ভাইরাসটি এমন কোন মারাত্মক ভাইরাস নয় যে, আমাদের ক্ষতি করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা ঘরে অবস্থান করবো কেন ? ঘরে অবস্থান করবো এই কারণে যে, এতে করে প্রথমত আমাদের কম সংখ্যক লোকের মধ্যে সংক্রমন ছড়াবে। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক তাই আমরা যথাসম্ভব ঘরে অবস্থান করবো, ভিড় এড়িয়ে চলবো, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুবো, হাঁচি-কাশি ও শ্লেষ্মা খোলা জায়গায় না ফেলে রুমাল বা টিস্যুতে ফেলবো এবং সবসময় পরিষ্কার রাখবো।
অনুগ্রহপূর্বক খাদ্য মজুদ করবেন না। পৃথিবীতে বাঘ, ভাল্লুক, বানর ও তিমি হতে শুরু করে সাগরতলে লক্ষ লক্ষ কোটি প্রাণী কেউ কি খাদ্যের অভাব আছে? যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিইতো আহার যোগাচ্ছেন, তবে আমরা কেন খাদ্য জমাবো ? শুধুমাত্র সুষম বন্টনের অভাবে মানুষদের মধ্যে খাদ্য অভাব। আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা অনন্তকাল বাঁচবো না। পৃথিবীতে যেইদিন এসেছি, সেইদিন আসার সময় আমাদের রিটার্ন টিকেট বা যাওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাই মুত্যু আমাদের অনিবার্য কিছুদিন আগে বা পরে, নিজেকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা তাই সবসময় করা উচিত।
আবার অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় করোনায় মারা গেলে জানাজা ও গোসল পাওয়া যায় না, এই আক্ষেপ থাকে। কিন্তু জেনে রাখবেন হাদীসে আছে, মহামারীতে মুত্যু হলে শহীদি দরজা লাভ হয়। তাই এটা নিয়ে এত দুঃখ আক্ষেপের কিছু নেই।
কথায় আছে, বনের বাঘে নয়, মনের বাঘে খায়। তাই আমাদেরকে মানসিভাবে সম্পূর্ণরুপে দৃঢ়চেতা ও শক্ত থাকতে হবে। মনে করবেন, করোনা সাধারণ সর্দি-কাশির মতো একটি রোগ। এতে মৃত্যুর তেমন কোন ঝুঁকি নেই। এ পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত রোগীর ৫ % মাত্র মারা গেছে। বাকি ৯৫ % সুস্থ হয়ে যায়। আর অনুগ্রহপূর্বক ফেইসবুকে নিশ্চিত না হয়ে কারো শোনা কথায় মিথ্যা পোষ্ট দিয়ে মানুষকে আতংকগ্রস্ত ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।
আর এই সময়ে যেসব দরিদ্র লোক আপনাদের কাছে হাত পাতবে তাদেরকে সাহায্য করুন।বিশেষ করে কেউ খাবার চাইলে তাকে খাওয়ান। খুদার্ত ব্যক্তিকে খাওয়ানো অন্যতম পূণ্যের কাজ। সামর্থ্য মতো সাহায্যপ্রার্থীকে আমরা সাহায্য করি।
সবচেয়ে, বড় কথা আমরা সরকারের ঘোষণা মোতাবেক বিধিবিধান মেনে চললে নিজেরাও সুস্থ থাকবো, দেশের সবাই সুস্থ থাকবে। আমরা সবাই নিজকে ও নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আরো বাঁচতে চাই। তাই আসুন কষ্ট করে আগামী ৭ দিন সবাই নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করে করোনা ভাইরাস ছড়ানো হতে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হউন। আমীন।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*