প্রাণের ৭১

বাংলাদেশের বড় ভুল: প্রতিশোধ বনাম সংস্কার – দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকে দেশটি সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে প্রতিশোধের দিকে ঝুঁকছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতির জন্য বড় ভুল হতে পারে।

প্রায় এক বছর আগে, ২০২৪ সালের আগস্টে, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এই অভ্যুত্থানে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং অনেকে আহত হয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকার শান্তি পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘদিনের অপশাসনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের চেয়ে প্রতিশোধের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা, যেমন দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও এই দলটির এখনও কিছু সমর্থন রয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ আরাফাত দাবি করেছেন, দলটির “জনগণের ম্যান্ডেট” ছিল এবং তারা “জিহাদিস্টদের” দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে একটি “জুলাই চার্টার” প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যা নির্বাচনের পথ সুগম করবে। তবে, এই সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্যের অভাব রয়েছে। কেউ কেউ টেক্সটাইল বা শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন, আবার নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ইসলামী উত্তরাধিকার আইন সংশোধন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর বিক্ষোভের কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে উল্লেখযোগ্য ছিল, এখন অনিশ্চয়তার মুখে। একটি সাম্প্রতিক শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে, হাসিনার শাসনকালে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা।

দ্য ইকোনমিস্ট সতর্ক করে দিয়েছে যে, প্রতিশোধের রাজনীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং অহিংস শাসন ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ এখনও জনগণের সমর্থন ধরে রেখেছে, তবে সংস্কারের পথে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সময়োপযোগী নির্বাচনের মাধ্যমে এই সমর্থন টিকিয়ে রাখা জরুরি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে পারে তার ওপর। বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের এই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

Bddigist






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*